বৃহস্পতিবার মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকল জলপাইগুড়ি। অর্থাভাবে শববাহী গাড়ি না মেলায় মহিলার দেহ কাঁধে তুলে হাঁটছেন স্বামী ও ছেলে। যা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বাংলাকে। স্মৃতিতে ভেসে এল ২০০৬ সালে প্রতিবেশী রাজ্য ওডিশার কালাহান্ডির করুন স্মৃতি। সেখানেও টাকার অভাবে স্ত্রীর দেহ কাঁধে করে নিয়ে হেঁটেছিলেন স্বামী।
ক্রান্তি এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মীরানি দাস অসুস্থ হয়ে গত কয়েকদিন ধরেই জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে ওই মহিলার মৃত্যু। জলপাইগুড়ির হাসপাতাল থেকে ক্রান্তির দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। মায়ের দেহ বাড়ি নিয়ে যেতে মৃতার ছেলে ও স্বামী শববাহী গাড়ির খোঁজ করেছিলেন। মৃতার ছেলে ও স্বামীর দাবি, হাসপাতাল থেকে বাড়ি পর্যন্ত যেতে শববাহী গাড়ি হাজার তিনেক টাকা চেয়েছিল। কিন্তু এত টাকা দেওয়ার সামর্থ দিন মজরের কাজ করা ছেলের নেই।
অনের আবেদন-নিবেদনেও কাজ হয়নি।
নিরুপায় হয়ে শেষপর্যন্ত ৫০ কিমি পথ যেতে মায়ের দেহ কাঁধে তুলে নেন ছেলে। কাঁধ দেন মৃতার স্বামীও। সাত সকালে সেই দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে যায় জলপাইগুড়ি। অবশ্য, পুরো রাস্তা দেহ কাঁধে বাবা-ছেলেকে হাঁটতে হয়নি। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে মরদেহ গাড়িতে করেই বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে বিনামূল্যে শববাহী গাড়ির পরিষেবা রয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে তাহলে কেন সেই পরিষেবা মিলল না? হাপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, মৃতার পরিবারের তরফে শববাহী গাড়ির আবেদন করা হয়নি। এমনকী হাসপাতালের রোগী সহায়তা কেন্দ্রেও যোগাযোগ করা হয়নি।
এই ঘটনায় শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর গোস্বামী রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করেছেন। বলেছেন, 'হতভাগ্য পুত্র সন্তান ও স্বামী বাংলার বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শব বয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন সব কাজ সম্পন্ন। এ দিনের মর্মান্তিক ঘটনাই সেই কাজ শেষের প্রমাণ দিল।' যদিও গোটা বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।