কপালে চন্দনের আঁকিবুকি নিয়ে মাথায় টোপর চড়িয়ে ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত 'বর'-রা বসে আছেম ভ্যানে। রীতিমতো মাইকে হাঁক পেড়ে সেই 'বর' অর্থাৎ জমাইদের ফেরি করছেন ফেরিওয়ালা। তাঁদের কারও দাম ৫০০০ আবার কারও ২০০০। বেশ সস্তায় এক হাজারেও বিকোচ্ছে জামাই।
তবে সেই বরের কোনও 'গ্যারান্টি' নেই বলেই পরিস্কার জানিয়ে দিচ্ছেন ফেরিওয়ালা নিজেই। জামাইষষ্ঠী মিটতে না মিটতে এভাবে 'জামাই বিক্রি'-র বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সবার চক্ষু চড়কগাছ। এই ঘটনা পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের।
বুড়ো শিবের গাজনে প্রতি বছর এভাবেই হয়ে থাকে জামাই বিক্রির রঙ্গ-তামাসা। তিন দিন ধরে তা নিয়েই প্রবল উন্মাদনায় ভাসেন গ্রামের মানুষজন। প্রায় চারশো বছর ধরে খণ্ডঘোষের বোসপাড়া সংলগ্ন এলাকায় হয়ে আসছে বুড়ো শিবের গাজন। মূলত খণ্ডঘোষের রায়পাড়া, ভট্টাচার্য পাড়া ও বোসপাড়া মিলিয়ে তিন দিনের বুড়ো শিবের গাজন হয়।
পুরোহিত রাজেশ ভট্টাচার্য্য ও উমাপদ ভট্টাচার্যরা জানালেন, সাবেক রীতি মেনেই গাজন হয়ে আসছে। তবে লোকসভা নির্বাচনের জন্য এবার গাজনের তারিখ একটু পিছিয়ে দিতে হয়েছে। গাজনে এলাকার ১০০ থেকে ১৫০ জন সন্ন্যাস গ্রহণের পর তাঁরা বুড়ো শিবের পূজোপাঠে অংশ নেয়। আর বুড়ো শিবের গাজনকে ঘিরে সন্ন্যাসরা বিভিন্ন ’সং’ সাজার মাধ্যমে বিভিন্ন চরিত্র ও কাহিনী তুলে ধরেন। সেখানে যেমন থাকে বর্তমান সময়ের ঘটনাবলী তেমনই প্রাধান্য পায় পৌরাণিক কাহিনী। চলে ভ্যানে জামাই ফেরির তেমনই এক রঙ্গ তামাসাও।
আরও পড়ুন- Kanchanjungha Express: ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস! শূন্যে ঝুলছে বগি! মৃত্যু মিছিল, আহত বহু
খণ্ডঘোষের বুড়ো শিবের গাজনে এই 'জামাই ফেরি’ এবার বেশ সাড়া ফেলেছে। ফেরিওয়ালার ভ্যানে বসা জামাইদের নিয়ে মজা করে দরদাম করতেও দেখা গিয়েছে গ্রামবাসীদের।দরদাম করার সময় জামাইয়ের গাল তোবড়া কিনা, পাটিতে সব দাঁত আছে কিনা, সে সব প্রশ্নের উত্তরও খরিদ্দারকে দিতে হয়েছে। সত্যি এযেন এক অভিনব ভাবনা।
আরও পড়ুন- C V Ananda Bose: অবিলম্বে রাজভবন থেকে সরানো হোক কলকাতা পুলিশের কর্মীদের, নির্দেশ রাজ্যপালের
খণ্ডঘোষের বাসিন্দা পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম বলেন, “বুড়ো শিবের গাজনে মানুষের ঢল নামে। ওইসব রঙ্গ তামাসা দেখে গাজন উৎসবে আসা মানুষজন একটু আনন্দ পায়, মজাও পায়। জামাইফেরি গাজনের অন্যতম আকর্ষণও বটে। সবাই সেটা উপভোগও করেন।”