মাথা থেঁতলে দিয়ে বৃদ্ধা মাকে নৃশংস ভাবে খুনের অভিযোগ ছেলের বিরুদ্ধে। এখানেই শেষ নয়, ঘন্টার পর ঘন্টা মায়ের দেহ আগলে বসে থাকল মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি মঙ্গলবার ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম থানার ধনকুড়া গ্রামে। মা মণিকা পাল কে (৫০) খুনের অভিযোগে পুলিশ অভিযুক্ত ছেলে অমর পালকে গ্রেফতার করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য এদিনই মৃত মহিলার দেহ পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ মর্গে। মাতৃ হত্যার এমন ভয়ানক ঘটনার কথা শুনে স্তম্ভিত আউশগ্রামের বাসিন্দারা ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ,ধনকুড়া গ্রামেই বাড়ি দম্পতি পরিমল পাল ও মণিকা পালের। অমর তাঁদের একমাত্র সন্তান। পরিমলবাবু রাঁধুনীর কাজ করে যেটুকু রোজগার করেন তা দিয়ে কোনওরকমে তাঁদের সংসার চলে। রাঁধুনির কাজের জন্য অধিকাংশ সময়েই পরিমলবাবুকে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। একটি পর্যটক দলের হয়ে রাঁধুনির কাজে যোগ দিতে কিছুদিন আগে পরিমলবাবু ভিনরাজ্যে চলে গিয়েছেন। বাড়িতে ছিল তাঁর স্ত্রী মণিকাদেবী ও মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে অমর। প্রতিবেশীদের কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে অমর কখন তাঁর মাকে হত্যা করে ঘরে বসে আছেন।
এলাকার কয়েকজন কৃষক এদিন সকালে মণিকাদেবীদের বাড়ির পাশ দিয়ে চাষের জমিতে যাচ্ছিলেন । ওই সময়ে হঠাৎ তাদের নজরে পড়ে মণিদেবীর রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে ঘরের মেঝেতে। আর তার
পাশেই অমর বসে। যা দেখেই ওই কৃষকরা সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের অন্য বাসিন্দাদের ঘটনার কথা জানান। সেই দৃশ্য দেখেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। সেই খবর পেয়েই আউশগ্রামের ছোড়া ফাঁড়ির পুলিশ মণিকাদেবীর বাড়িতে পৌছায়। পুলিশ মণিকা দেবীর মৃত দেহর উদ্ধার করে তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে তদন্তে নামে। অমরকে গ্রেফতার করা হয়।
এলাকাবাসীদের কথায়, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় থকেই অমরের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তারপর থেকে তার আর পড়াশোনা করা হয়নি । মাঝে মধ্যেই অমরের রাগ চরমে উঠে যায়। গ্রামবাসীরা এও জানান, রেগে গিয়ে মাঝে মধ্যেই কার্যত জ্ঞানশূন্য হয়ে গিয়ে অমর তাঁর মাকে মারধর করতো। বছর দেড়েক আগে অমর তাঁর মাকে বঁটি দিয়ে কোপায়। প্রতিবেশীরা চলে আসায় সেবার কোন রকমে মণিদেবী প্রাণে বেঁচে যান। সম্প্রতি আদি বাড়ি ছেড়ে খানিকটা দূরে মাঠের মাঝে বাড়ি করে থাকতে শুরু করেছে পাল পরিবার। সেই কারণে এদিন মণিদেবী চিৎকার চেঁচামেচি করলেও কেউ তা শুনতে পাননি।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে ,মোবাইল ফোন নিয়ে সোমবার গভীর রাতে অমরের সঙ্গে তাঁর মায়ের অশান্তি হয়। তখনই অমর ঘরের মেঝেতে মণিকাদেবীর মাথা ঠুঁকে ঠুঁকে থেতলে দেয়। তার জেরেই মণিকাদেবীর মৃত্যু হয়। সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। এদিনই ধৃতকে ২৮ জুন পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে বর্ধমান আদালত।