জিয়াগঞ্জে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার নিহত বন্ধুপ্রকাশ পালের বন্ধু সৌভিক বণিক। মঙ্গলবার রাতে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর সৌভিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে মঙ্গলবার সকালে শিক্ষক পরিবার খুনে গ্রেফতার করা হয় রাজমিস্ত্রি উৎপল বেহেরাকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উৎপলের দেওয়া তথ্যে বহু অসঙ্গতি মিলেছে। এছাড়া বিমার সংস্থায় লগ্নী সংক্রান্ত প্রতারণার অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে সৌভিক বণিককে। ফার্স্ট ট্রাক আদালতের বিচারক সুপর্ণা সরকার সৌভিক বণিকের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। ২৭ অক্টোবর অবধি পুলিশ হেফাজত দিয়েছে আদালত।
এই ব্যপারে মুর্শিদাবাদের জেলা পুলিশ সুপার শ্রী মুকেশ বলেন , 'সৌভিক নানা সময় সাগরদীঘি এলাকার মানুষকে বাড়তি লাভের লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি লগ্নী সংস্থায় লগ্নী করাত। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই প্রতারককে'।
ধৃতের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ড বিধির ৪২০, ৪০৬ ,৪৬৭, ৪৬৮ ৪০৯ ও ১২০বি সহ ৩৪ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। দশমীর দিন রাতে খুন করা হয় শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল ও তাঁর স্ত্রী, পুত্রকে। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে ব্যবসায়িক ও সম্পত্তিগত কারণেই খুন করা হয়েছে শিক্ষক পরিবারকে। তারপরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিউড়ি থেকে আটক করা হয় নিহত বন্ধুপ্রকাশের ব্যবসায়িক অংশীদার সৌভিক বণিককে। পুরো ঘটনার পুননির্মান করা হয়। দুষ্কৃতীদের ঝাড়খণ্ড যোগ রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ‘ভারতরত্ন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে সাভারকরকে’, মহারাষ্ট্রে বললেন প্রধানমন্ত্রী
ঘটনার ছ'দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ সৌভিককে গ্রেপ্তার না করায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে মানুষের মনে ক্ষোভ জমতে থাকে। এরই মধ্যে জিয়াগঞ্জে শিক্ষক পরিবার খুনে গ্রেফতার রাজমিস্ত্রি উৎপল বেহেরা। জেলা পুলিশ মঙ্গলবার সুপার জানান, ‘উৎপলের থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে বন্ধুপ্রকাশের কাছে ২৪ হাজার ১৬৭ টাকা পেত উৎপল বেহরা। প্রিমিয়ামের ওই টাকা জমা করেনি বন্ধুপ্রকাশ। সেই টাকা ফেরত চাওয়াতে শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ নাকি গালিগালাজ করেন উৎপলকে। তার পরেই ওই খুনের পরিকল্পনা করে সে। দশমীর দিন বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি যায় উৎপল। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তাকে বাড়ির মধ্যে আসতে বলা হয়। সেই সুযোগেই শিক্ষকের পরিবারকে খুন করে উৎপল।’ এছাড়াও জানা যায়, ধৃত জেরায় স্বীকার করেছে সে দোকান থেকে হাঁসুয়া কিনে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে। জিয়াগঞ্জে তার দিদির বাড়ি। পুজোর সময় উৎপল সেখানেই ছিল। দিদির বাড়িতে বসেই শিক্ষক পরিবার খুনের নকশা বানায় সে। এরপর পরিকল্পনা মত খুন করে ওই রাজমিস্ত্রি।
ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা বিমার কাগজ আর তার পায়ের ফেলে যাওয়া জুতো ও এক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান থেকে পুলিশ রহস্য ভেদ করে। গ্রেফতার করা হয় উৎপলকে। নিহত শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ ও তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার সৌভিক বণিক একাধিক বিমা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে কোনও সমস্যা ছিল কি? এই ঘটনায় আরেক ধৃত উৎপলকে কি চিনতো সৌভিক? এই সব প্রশ্ন নিয়েই আপাতত বন্ধুপ্রকাশ পাল ও তার পরিবার খুনের জট খুলতে চাইছে পুলিশ।