Advertisment

এপুজোয় নজরকাড়া সাজ 'দেবাদিদেব'-এর, ভোগ নিবেদন মায়ের সহচরীদেরও

শহর থেকে জেলা, বহু দুর্গাপুজোর পিছনে রয়েছে নানা ইতিহাস। পুজোর রীতি-রেওয়াজেও রয়েছে বিভিন্নতা।

IE Bangla Web Desk এবং Nilotpal Sil
New Update
South 24 Parganas Jaynagar Motilal Bari Durga Puja

পুজোর দিনগুলিতে এলাকাবাসীদের ঢল নেমে যায় এবাড়িতে।

শহর থেকে জেলা, বহু দুর্গাপুজোর পিছনে রয়েছে নানা ইতিহাস। পুজোর রীতি-রেওয়াজেও রয়েছে বিভিন্নতা। বিশেষ করে বনেদি বাড়ির পুজোগুলিতে যথাসম্ভব আগের নিয়মই অটুট রাখার মরিয়া চেষ্টা থাকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের মোতিলাল বাড়ির এই দুর্গাপুজোও তেমন পুজোগুলিরই একটি।

Advertisment

এপুজোর ইতিহাস…

দক্ষিণ জয়নগরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী জয়চণ্ডী। এলাকায় জনশ্রুতি, দেবী জয়চণ্ডীর নামানুসারেই এলাকার নাম হয় জয়নগর। প্রায় ৫০০ বছর আগে জয়নগরের মোতিলাল বংশের পূর্বপুরুষ গুণানন্দ মোতিলাল তাঁর আদি নিবাস যশোরের বিক্রমপুর থেকে সপরিবারে সাগরসঙ্গমে যাত্রা শুরু করেছিলেন। একদিন সন্ধেয় বজরা নোঙর করে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা করা হয়। রাতে সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন গুণানন্দ মোতিলাল স্বপ্নে দেখেন এক বালিকাকে। সেই বালিকা স্বপ্নাদেশ দিয়ে জানায়, তিনিই দেবী জয়চণ্ডী। তাঁকে প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়।

গুণানন্দ জঙ্গলের মধ্যে একটি বকুল গাছের তলা থেকে দেবী জয়চণ্ডীর পাথরের খণ্ড খুঁজে পান। সেই পাথরের খণ্ড দেখে বকুলগাছের কাঠ দিয়ে দেবীর মূর্তি ও মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। তারপর থেকে গুণানন্দ মোতিলাল সেখানেই বসবাস শুরু করেন। এরপরেই মোতিলালবাড়িতে প্রথম দুর্গা পুজো শুরু করেন তিনি। তারপর থেকেই বংশ পরম্পরায় এই পুজো চালিয়ে আসছেন মোতিলাল বাড়ির সদস্যরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জৌলুস কমেছে তবে প্রথা ও রীতি-নীতির অন্যথা হয়নি।

মোতিলাল বাড়ির দুর্গা মন্দিরের দালানে শিবকেও সাজসজ্জায় ভূষিত করা হয়। গৃহদেবতা রঘুনাথজির নিত্য ভোগ হয় পরিবারে। দুর্গা মন্দিরের দালানে জোরকদমে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। পরিবারের সদস্যরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। পুজোর সময় সবাই চলে আসেন মোতিলাল বাড়িতে। একচালার প্রতিমা মায়ের। বোধনের ঘট বসে প্রতিপদ থেকে। বেলতলায় ঘটের পুজো হয়। সন্ধিপুজোয় আগে মাটির প্রদীপ ব্যবহার করা হতো। কিন্তু তার পরিবর্তন হয়েছে। আগে ছাগ বলি প্রথাও ছিল। অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো নিয়ম অনুসারে চলে আসছে। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা নয়, এলাকার মেয়েকেই কুমারী পুজোয় নেওয়া হয়। পরিবারের সদস্য দিব্যেন্দু মোতিলাল বলেন, ''আমাদের নিয়ম নিষ্ঠার কোনও পরিবর্তন হয়নি।''

আরও পড়ুন- পালা করে রাত জাগা, প্রদীপ নিভলেই ‘অমঙ্গল’, প্রাচীন এই পুজো আজও চর্চায়!

সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত মাকে দুটি ভোগ নিবেদন করা হয়। একটি খিচুড়ি ও অন্যটি পোলান্ন বা সাদা ভাত। এছাড়া আলাদা করে মায়ের সহচর-সহচরীদের উদ্দেশ্যে একটি মাছের পদ নিবেদন করা হয়। ভোগের থেকে আলাদা রাখা হয় এই পদ। সন্ধ্যায় লুচি ভোগ দেওয়া হয়। দশমীর দিন বিসর্জনের আগে গণ্ডিকাটার নিয়ম আছে। এই গণ্ডিকাটার আগেই মাকে পান্তাভোগ নিবেদন করা হয়। সেই দিন পরিবারের সবাই নিরামিশ খান।

আরও পড়ুন- ভেস্তে যেতে পারে পুজোর প্ল্যানিং? মহালয়ার দিনেই রইল আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাস

পরিবারের আর এক সদস্য জয়মাল্য মোতিলাল বলেন, "দুর্গা প্রতিমার গয়না সোনা ও রুপোর। কিন্তু অস্ত্র ও মায়ের মুকুট হয় রুপোর। এছাড়া মাকে সোনার টিপ পরানো হয়। মোতিলাল পুকুরেই আমাদের প্রতিমার বিসর্জন হয়। বাইরের কিছু লোকজনকে দিয়ে মাকে নিয়ে যাওয়া হয়। দেবীর বরণ দেখার মতো হয়। পরিবারের সব মহিলারাই এতে অংশ নেন।"

Durgapuja West Bengal South 24 Pgs
Advertisment