ফিল্মি কায়দায় মাত্র দশ মিনিটের নিখুঁত অপারেশনে জয়নগরের তৃণমূল বিধায়কের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি, বোমার ঘটনায় ক্রমশই সন্দেহ জোরদার হচ্ছে সেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে ঘিরেই। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন মোট ১১ জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে পুলিশ।
ভয়াবহ এই আক্রমণের পরপরই বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থলে জেলা পুলিশের পাশাপাশি যান সিআইডি আধিকারিকরা। জেলা পুলিশ ও সিআইডি যৌথভাবে তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থল জয়নগর পেট্রোল পাম্প থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তা খতিয়ে দেখে সন্দেহভাজন চার দুষ্কৃতীকে গত রাতেই গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতরা হল সাজামুল নস্কর, রাজা, মুন্না এবং হাম্পা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত চারজনের বাড়ি জয়নগর, মথুরাপুর ও মন্দিরবাজার এলাকায়। ধৃতদের আজ বারুইপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে তাদের দশদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন, তৃণমূল বিধায়কের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা, গুলি; নিহত তিন
পুলিশ এ ঘটনায় মৃতদের নাম পরিচয় প্রকাশ করেছে। প্রাণ হারিয়েছেন বিধায়কের গাড়ির চালক সেলিম খান, স্থানীয় তৃণমূল নেতা সরফুদ্দিন এবং তৃণমূল কর্মী আমিন আলি সর্দার। এদের মধ্যে সরফুদ্দিন একজন কুখ্যাত দুষ্কৃতী বলে পরিচিত। এক সময়ে খুনের আসামী বর্তমানে ছিলেন বিধায়কের ছায়াসঙ্গী এবং তৃণমূলের শাখা সংগঠন জয় হিন্দ বাহিনীর সভাপতি। জানা গিয়েছে, বাবুয়া নামে অপর এক স্থানীয় দুষ্কৃতীর দলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল সরফুদ্দিনের। এলাকার তৃণমূল নেতা গৌর সরকারের অনুগামী এই বাবুয়া।
ঘিরে রাখা অকুস্থল
এই হামলায় আদৌ জয়নগরের বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস নিশানা ছিলেন, না লক্ষ্য ছিল সরফুদ্দিন, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তদন্তকারীরা। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, দু'দল দুষ্কৃতীর মধ্যে বিবাদের জেরেই গতকাল মর্মান্তিক পরিণতি হয় তিনজনের। সরফুদ্দিনকে খুনের উদ্দেশ্যেই শুক্রবার রাতে পেট্রোল পাম্পে জমা হয়েছিল দুষ্কৃতীরা। তার সঙ্গে থাকার কারণেই প্রাণ দিতে হয়েছে অন্য দুজনকে।
এই ঘটনা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিরোধীরা। এ বিষয়ে সিপিএম-এর জেলা সভাপতি শমীক লাহিড়ি বলেন, "এটা তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে হয়েছে।" একই দাবি করলেন এসএউসিআই নেতা তরুণ নস্কর। তিনি বলেন, "দলের নিজেদের মধ্যে লড়াইতেই এই শুটআউট, খুন।" যদিও এই খুনের পিছনে সিপিএম ও এসইউসির দিকে আঙ্গুল তুলেছেন জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা। তিনি বলেন, "আমাদের বিধায়ককে খুন করার লক্ষ্যে ওরা আক্রমণ করেছিল।"
এদিনের এই খুনের ঘটনার পর জয়নগর শহরতলি একেবারেই থমথমে। মানুষের চোখ মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।