জয়নগরে বিধায়কের গাড়িতে আক্রমণের ঘটনায় আরও দু'জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতদের নাম সইফুল নস্কর ও সালাউদ্দিন শেখ। এ নিয়ে ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ জনে। তাদের নিজেদের হেপাজতে এনে পুলিশ দফায় দফায় জেরাও শুরু করেছে।
জয়নগর কান্ডের মোটিভ অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। ধৃতদের প্রাথমিক বয়ানে অনেকগুলি মোটিভই পুলিশের কাছে উঠে এসেছে। আর তার ফলেই এই ঘটনার মূল কারণ নিয়ে ধন্দ দেখা দিয়েছে। বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসকে লক্ষ্য করে হামলা, না, জয়নগরে তৃণমূলের জয় হিন্দ বাহিনীর সভাপতি সরফুদ্দিনকে মারতে এই হামলা, তা নিয়ে তদন্তকারিদের মনে প্রশ্ন রয়েছে।
যদিও ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, সরফুদ্দিনকে খুনের জন্য 'সুপারি কিলার' বা ভাড়াটে খুনি লাগানো হয়েছিল। এই পরিকল্পনার মাথা হিসেবে বাবুয়া ওরফে আবু কাহার ও ফিরোজের নামও পুলিশ পেয়েছে। তবে আরও একটি সূত্র থেকে পুলিশ জেনেছে, এর বাইরেও বড় কোনও চাঁই রয়েছে। যার বুদ্ধিতেই বাবুয়া সুপারি কিলার লাগিয়েছিল। তবে সেই মাথার হদিশ পায়নি পুলিশ, কারণ বাবুয়া এখনও অধরা। তাকে ধরার পরই পুরোটা জানতে পারবেন তদন্তকারীরা বলে আশা।
আরও পড়ুন: জয়নগরে বিধায়ককে খুন করা উদ্দেশ্য ছিল না? ধন্দে তদন্তকারীরা
তদন্তকারিদের একাংশের ধারণা, সরফুদ্দিনের প্রতি পুরানো শত্রুতার প্রতিহিংসা নিতেই এই হামলা হয়ে থাকতে পারে। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথোপকথনে এই তথ্য উঠে এসেছে। তাঁদের দাবি, বিশ্বনাথ দাস নন, সরফুদ্দিনের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় তাঁকেই শেষ করতে এই হামলা। কারো কারো মতে, এলাকার দখল সরফুদ্দিনের হাতে চলে যাচ্ছিল। সেই জন্য তাঁর শত্রু সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছিল।
কিন্তু পুলিশ মনে করছে, এই হামলার পিছনে বড় কোন মাথা রয়েছে। সেই ব্যক্তিই এই হামলার পরিকল্পনা করে। তারপর বিভিন্ন জায়গা থেকে দুষ্কৃতী ও সুপারি কিলার যোগাড় করে হামলা চালায়। সেদিন রাতে দুষ্কৃতীদের টার্গেটই ছিল বিধায়কের গাড়িটি। তারা নির্মূল করতে চেয়েছিল গাড়ির আরোহীদের। পরিকল্পনা বেশ বুঝেশুনেই করা হয়। কারন তারা জানতে পারে, পেট্রোল পাম্পের কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা খারপ। কিন্তু পাম্প লাগোয়া মালিকের বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরা যে ওই পাম্পের ওপর নজর রাখছে, তা জানতে পারে নি দুষ্কৃতীরা। তার ফলেই তারা ফুটেজে ধরা পড়ে যায়।
আরও পড়ুন: তৃণমূল বিধায়কের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা, গুলি; নিহত তিন
ঘটনার দুু-তিন দিন পর থেকে জয়নগরের দুর্গাপুরে পেট্রল পাম্পের সামনের বাজার ছন্দে ফিরে এসেছে। রবিবার ও সোমবার স্বাভাবিক ভাবে বাজার বসেছে, রাস্তাঘাট সচল। এলাকার বাসিন্দারাও আতঙ্ক কাটিয়ে বাইরে বেরিয়েছেন।
এদিন জয়নগর থানার অন্তর্গত ফতেপুরের সইফুল নস্কর এবং হাসানপুরের সালাউদ্দিন শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের বারুইপুর মহকুমা আদালতে পাঠানো হলে বিচারক ১০ দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেন। তবে এই ঘটনায় মূল চক্রী হিসেবে বাবুয়ার নাম উঠে এসেছে পুলিশের কাছে। কিন্তু বাবুয়া ঘটনার পর থেকে পলাতক। এই বাবুয়া বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের বিরোধী গোষ্ঠির এক নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।