বাংলার প্রাচীন লোকশিল্প যাত্রা। সেই গ্রাম বাংলার সেই প্রাণের উৎসবের জৌলুস গত কয়েক বছরে বেশ কিছুটা কমছে। তাই প্রাচীন এই শিল্পকে বাঁচাতে তৎপর হয়েছ দক্ষিণবঙ্গ যাত্রা উৎসব কমিটি। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের নিমতৌড়িতে বসেছে যাত্রা উৎসবের আসর।
যাত্রা উৎসবের আয়োজন করেছে দক্ষিণবঙ্গ যাত্রা উৎসব কমিটি। সাধারণ মানুষের মনে যাত্রা শিল্প নিয়ে আবার উৎসাহ ফিরিয়ে আনার জন্য যাত্রা উৎসবের আসর বসেছে। তমলুকের নিমতৌড়ি এলাকার একটি কালী মন্দিরের সামনের মাঠে দক্ষিণবঙ্গ যাত্রা সংস্থার পক্ষ থেকে ১০ দিনের যাত্রা মেলা বা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে শুধু পূর্ব মেদিনীপুর জেলার যাত্রা সংস্থাই নয়, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার যাত্রা সংস্থার যাত্রাপালা-গান মঞ্চস্থ হবে। এই যাত্রা উৎসব ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এই যাত্রা উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী বিপ্লব রায় চৌধুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক-সহ তমলুকের বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র। যাত্রা উৎসব উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে এসে মন্ত্রী বিপ্লব রায় চৌধুরী বলেন, "গ্রামবাংলা তথা বাঙালির প্রাচীন বিনোদনের মাধ্যম যদি কিছু থাকে তা হল যাত্রাশিল্প। এই যাত্রা শিল্পের বিস্তার ও ব্যাপ্তি বাঙালির মননে। একসময় কলকাতার বিখ্যাত যাত্রাপালার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার যাত্রাপালাগুলি উৎসব অনুষ্ঠানে গ্রামেগঞ্জে রমরমিয়ে অনুষ্ঠিত হত। টিকিট কেটেও যাত্রাপালা শোনার হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। কিন্তু একটা সময়ের পর যাত্রাশিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। এই আবহে এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।"
বর্তমান সময়ে টিভির পাশাপাশি পকেটে থাকা মোবাইল ৮ থেকে ৮০ সব বয়সী মানুষেরই প্রধান বিনোদনের অবলম্বন হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, স্যাটেলাইট চ্যানেল বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াকে মানুষ বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বিভিন্ন সিরিয়াল, সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ যাত্রাশিল্পকে কোণঠাসা করে ফেলেছে।
কিন্তু এতসব কিছুর পরেও এই ৫০০ বছরের প্রাচীন বিনোদনের মাধ্যম এখনও বেশ প্রাসঙ্গিক। কারণ যাত্রা শিল্প হল লাইভ আর্ট ফর্মের একটি মাধ্যম। ফলে যাত্রা শিল্প সরাসরি মানুষের মননে প্রভাব ফেলে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় প্রথমবার দক্ষিণবঙ্গ যাত্রা উৎসব কমিটির এমন অভিনব আয়োজনে সাড়া পড়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন- Curzon Gate: ঐতিহ্যবাহী কার্জন গেট তৈরি মমতার আমলে! সায়নীর ইতিহাস ওলটপালট মন্তব্যে জোর শোরগোল
যাত্রা শিল্পের নানা সমস্যা নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন যাত্রা শিল্পীরা।
মন্ত্রী বিপ্লব রায় চৌধুরী বলেন, "যাত্রা শিল্পীরা বেশ কয়েকটি দাবি-দাওয়া সম্বলিত একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। তা আমরা খতিয়ে দেখে যাতে সমস্যা মেটানো যায় সেই চেষ্টা করছি।"