পুরনো দলে সলতে পাকানোর কাজ প্রায় শেষ। এবার শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা মাত্র। বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে 'দিদি'র সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে শোভন বললেন, 'রাজনৈতিকভাবে দিদির ইচ্ছে বাস্তবায়িত করাই আমার কাজ।' বৈশাখীর দাবি, 'অভিমানের প্রাচীর ভেঙেছে।'
বুধবার দুপুরে হঠাৎই নবান্নে পৌঁছে যান শোভন চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নবান্নের ১৪ তলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভন-বৈশাখীর কথা হয় প্রায় ১ ঘন্টা।
এই প্রথম নয়, তৃণমূল ছাড়ার পর ২০১৯সালে ভাইফোঁটার দিন দুপুর মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতেও দেখা গিয়েছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। সেই সময় তাঁর জোড়া-ফুলে ফেরা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। এ দিনও সেই জল্পনাই আবারও তুঙ্গে ওঠে।
কিন্তু, তারপর তৃণমূলের সঙ্গে আরও দূরত্ব বাড়ে শোভনের। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিজেপির হয়ে তৃণমূল সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। ক্রমেই একাধিক ইস্যুতে বিজেপির সঙ্গে বৈরীতা বাড়ে তাঁর। ফলে বিজেপি ত্যাগ করেন শোভন-বৈশাখী। বিধানসভা ভোটে পছন্দের বেহালা পূর্ব কেন্দ্র না পাওয়ায় লড়াই থেকেও সরে দাঁড়ান তিনি।
দিদির সঙ্গে বৈঠকের পর কবে তৃণমূলে ফিরছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়? সাক্ষাৎ শেষে শোভন বলেন, 'আমার রাজনৈতিক জীবন দিদিকে কেন্দ্র করেই। দিদির ইচ্ছেই বাস্তবায়িত করাই আমার কাজ।' কিন্তু, পুরনো দলে ফেরার দিনক্ষণ কিছু জানাননি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র।
শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তৃণমূলে ওয়াপসি নিয়ে তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'দিদির প্রতি ওঁর যে শ্রদ্ধা তা সবার জানা। মাঝে মান অভিমানে দূরত্ব বেড়েছিল। কিন্তু সেই অভিমানের প্রাচীর ভেঙে গিয়েছে। দিদি ওঁর সঙ্গে আঝ বহু পুরনো কথা বলছিলেন। আমি এনজয় করছিলাম। আমার ভালো লাগছে যে শোভন ফের সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরতে পারবেন। দিদির সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজ করবেন।'
তৃণমূলে শোভন ছিলেন নেত্রীর খুবই ঘনিষ্ঠ। মোবাইলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নম্বর 'মা' বলে সেভ করা ছিল। কিন্তু, ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েনে তাঁর সঙ্গে দলের দূরত্ব তৈরি হয়। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রিয় কাননকে মন্ত্রীত্ব ও কলকাতার মেয়রের পদ থেকে সরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই ক্রমে জোড়া-ফুল বিরোধী নানা কথা বলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। পরে যোগ দেন বিজেপিতে। কিন্তু, সেখানেও শুরু থেকেই টিঁকতে পারেননি রাজ্যের প্রাক্তন এই মন্ত্রী। প্রথমে পদ, পরে নিজের পছন্দের বিধানসভা কেন্দ্র থেকে টিকিট না মেলায় বিজেপি ছাড়েন শোভন-বৈশাখী। এরপর ক্রমেই দলহীন হয়ে রাজ্য রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েন শোভন। যা তাঁর তৃণমূলে ফেরার পথ ক্রমশ উজ্জ্বল করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বেহালা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন শোভন। ২০২১ সালে ওই কেন্দ্র থেকেই তৃণমূলের প্রতীকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন শোভনের স্ত্রী রত্ন চট্টোপাধ্যায়। যদিও এই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে।
তৃণমূলে ফিরলেও রত্না-কাঁটা কী শোভন-বৈশাখীর কাছে গলায় বিঁধবে না? এ প্রসঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'যাঁর নাম করলেন তিনি আমাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক। যাঁকে দেখে মানুষ তৃণমূল কের সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছি ও কথা বলেছি আমরা। তাই এক্ষেত্রে অন্য কেউ অপ্রাসঙ্গিক।'