Advertisment

ছোট লালবাড়ির দায়িত্বে 'হাকিম সাহেব', সহকারী অতীন

পুরসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরহাদ হাকিমকে নির্বাচিত করবেন কাউন্সিলররা। তারপর প্রথা মাফিক বেছে নেওয়া হবে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষকে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
KMC_New_Team

মেয়র হিসাবে নাম ঘোষণার পর প্রথম দিনই কাজে ঝাঁপালেন ফিরহাদ হাকিম। এক্সপ্রেস ফাইল ছবি

কলকাতা পুরসভার পরবর্তী মেয়র হতে চলেছেন ফিরহাদ হাকিম (ববি) এবং ডেপুটি মেয়রের পদে বসতে চলেছেন অতীন ঘোষ। মেয়র ও ডেপুটি মেয়র পদে যথাক্রমে ববি হাকিম ও অতীন ঘোষের নামই যে চূড়ান্ত হতে চলেছে সে খবর এদিন সকালেই জানিয়েছিল দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা। এরপর প্রত্যাশা মতোই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতা পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরদের বৈঠকে দলের নেতা ও উপনেতার নাম ঘোষণা করে দেওয়া হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে। এবার শুধু পুরসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরহাদ হাকিমকে নির্বাচিত করবেন কাউন্সিলররা। তারপর প্রথা মাফিক বেছে নেওয়া হবে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষকে।

Advertisment

প্রসঙ্গত, এদিনই বিধানসভায় পুর আইন সংশোধন করেছে সরকার। এর ফলে, পুরসভার কাউন্সিলর না হয়েও যে কেউ মেয়র পদে বসতে পারবেন। তবে অবশ্যই শপথ গ্রহণ থেকে ছয় মাসের মধ্যে তাঁকে ভোটে জিতে আসতে হবে। উল্লেখ্য, ববি হাকিম বর্তমানে কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর নয়। ফলে, তাঁকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে কলকাতা পুরসভার যে কোনও একটি ওয়ার্ড থেকে ভোটে জিতে আসতে হবে।

publive-image নেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন অতীন ঘোষ। ছবি: শুভম দত্ত।

এদিন তৃণমূল কাউন্সিলরদের সভায় কার্যত মমতাই সব ঠিক করে দেন। তিনি বলেন, আমরা কেবল দলের নেতা ও উপ নেতা ঠিক করে দেব। এরপর আপনারা পুরসভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে মেয়র বেছে নেবেন। নেত্রীর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে সব কিছুই আগাম নির্ধারিত রয়েছে। এইসব কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কোনও কাউন্সিলরেরই যে নেত্রীর 'না বলা কথা' বুঝতে অসুবিধা হয়নি, তা বোঝা যায় খানিক পরেই। মমতা কাউন্সিলরদের যেকোনও একজনকে অনুরোধ করেন যাতে তিনি নেতার নাম ঘোষণার জন্য দলীয় নেতৃত্বকে প্রস্তাব দেন। এর পরই এক কাউন্সিলর প্রস্তাব না দিয়ে সরাসরি ববি হাকিমের নামই উচ্চারণ করে বসেন। এই ঘটনাতে ক্ষণিকের জন্য ইতস্তত বোধ করেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু, কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তিনি সামলে নেন এবং একইভাবে দ্বিতীয় জনও সরাসরি অতীন ঘোষের নাম ঘোষণা করে দেন।

শোভনের পর কে? বৃহস্পতিবার কলকাতার মেয়র পদে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ইস্তফার পর রাজ্য রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় জল্পনা ছিল এটাই। এদিন দেহরক্ষীদের হাত দিয়ে বেলা দেড়টা নাগাদ পুরসভায় পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন শোভন। তাঁর পদত্যাগপত্র জমা পড়েছে পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায়ের দফতরে।

publive-image শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পদত্যাগপত্র জমা পড়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি মালা রায়। এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ।

রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে মঙ্গলবারই পদত্যাগ করেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। সেদিনই নবান্ন থেকে বেরনোর পথে একদা প্রিয় কাননের প্রতি বর্তমানে চরম ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা জানিয়েছিলেন, মেয়র পদ থেকেও সরতে বলা হয়েছে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। এরপর থেকে ঐতিহ্যশালী কলকাতা পুরসভার মেয়রের পদ থেকে ইস্তফা ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। ফলে, গত দু'দিন ধরেই পুরকর্মী থেকে রাজনৈতিক মহল এমনকি আম জনতাও প্রহর গুনেছে। অবশেষে বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টা নাগাদ ঘটল সেই প্রত্যাশিত ঘটনা।

আরও পড়ুন- বিভ্রান্তি: মেয়রের পদত্যাগের পর আদৌ কি পুর কমিশনার দায়িত্ব নিতে পারেন?

publive-image শূন্য মেয়রের চেয়ার। ছবি: শশী ঘোষ

এদিকে, মেয়রের পদে ববি হাকিমের নামও উঠে আসাও অত্যন্ত প্রত্যাশিত। সাম্প্রতিক কালে তৃণমূল দলে বিবর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মন্ত্রীত্বের পাশাপাশি ববিকে রাজ্যের অন্দরে একাধিক জেলা এবং জাতীয় স্তরে একাধিক রাজ্যে তৃণমূলের সংগঠন গড়ে তোলার দায়িত্ব দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া, অতীতেও কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর হিসাবে ববির দীর্ঘ দিন কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। পাশাপাশি, বর্তমানে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলানোর ফলে পুরসভা পরিচালনার বিষয়ে ববির দক্ষতা রয়েছে বলেও মনে করছে তৃণমূলের একাংশ।

আরও পড়ুন- শোভনের বদলি আনতে আইন বদলাচ্ছে মমতা সরকার

প্রসঙ্গত, রাজ্যে পরিবর্তনের আগের বছর ২০১০ সালে 'ছোট লালবাড়ি' দখল করেছিল তৃণমূল। ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, "নেতা নয়, কোনও কর্মীকেই কলকাতার মেয়র করা হবে"। আর তারপরই মহানাগরিকের সিংহাসনে শোভনের অভিষেক। বলা যায় তখনই 'কর্মী' শোভনের রাতারাতি 'নেতা' হয়ে ওঠা। এরপর একাধিক দফতরের মন্ত্রীত্ব, কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দলের দায়িত্ব ক্রমে আরও ক্ষমতাবান করেছে। এরপর ব্যক্তিগত জীবনের নানা সমস্যায় বিতর্কে জডড়িয়েছেন কলকাতার সদ্য প্রাক্তন মেয়র। তাঁর কাজে অখুশি মমতা বারবার সমঝে দিলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এরপরই একে একে মন্ত্রক হারাতে থাকেন শোভন। শেষে দমকল ও আবাসন মন্ত্রক থেকে নিজেই পদত্যাগ করেন বেহালা পূর্বের বিধায়ক। সব শেষে কলকাতার মহানাগরিকের কুর্সিও ছেড়ে দিতে হল শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। তবে, এই সব কিছুই কি কেবল পারিবারিক ও ব্যক্তি জীবনের সমস্যার জন্যই না কি এর পিছনে রয়েছে দলবদলের রাজনীতির গন্ধও, প্রশ্ন ঘুরছে রাজনীতির অলিন্দে।

Advertisment