মন্ত্রীপদ ছাড়ার পর শোভন চট্টোপাধ্যায় কি বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন? আপাতত এই প্রশ্ন নিয়েই রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনা শুরু হয়েছে। বিজেপি সূত্রে খবর, এর আগে কলকাতার মেয়র দিল্লিতে গিয়ে গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। কিন্তু কি বিষয়ে কথা হয়েছে তা কেউই খোলসা করেননি।
তৃণমূলের অন্দরে আলোচনা চলছে, শুধুই কি পারিবারিক অশান্তির কারণে এই পদত্যাগ? যদিও তাঁর ব্যক্তিগত অশান্তি অনেক ক্ষেত্রে কাজে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন দলের একাংশ। তবে শোভনের বিজেপিতে যোগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজনৈতিক মহল। কোচবিহারে রথযাত্রার শুরুর দিন তৃণমূল কংগ্রেসের কোন নেতা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো চলছে। এদিকে শোভনের পদত্যাগ নিয়ে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, "যে জাহাজ ডোবে সেই জাহাজ ছেড়ে লোকজন পালিয়ে আসে। ডুবন্ত জাহাজে কেউ থাকতে চায় না। শোভন চট্টোপাধ্যায় আগে ঠিক করুন, কোন দলে থাকবেন"।
অন্যদিকে, "পুরোটাই নাটক" বলে মন্তব্য করেছেন বিজেপির যুব নেতা প্রীতম দত্ত। তাঁর দাবি, সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচতে শোভন নাটক করছেন, আর কিছু নয়।
উল্লেখ্য, রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে মঙ্গলবার বিকেলে ইস্তফা দিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। দমকল এবং আবাসন দফতরের মন্ত্রীর পদ থেকে শোভনের ইস্তফা এদিন গৃহীত হয়। ইস্তফাপত্র রাজ ভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এর আগে রাজ্য সরকারের পরিবেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় শোভনকে। আজকের পর তাঁকে কলকাতার মেয়র পদ থেকেও সরে যেতে বলা হয়েছে বলে খবর।
নবান্ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এর আগেও শোভন দু'-তিনবার পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি। এবার দুটি দফতর থেকেই তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং তা গৃহীতও হয়েছে। শোভনের ছেড়ে যাওয়া দুটি দফতর আপাতত সামলাবেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ 'ববি' হাকিম।
শোভন যদি মেয়র পদে ইস্তফা দেন, সেক্ষেত্রে কে হবেন কলকাতার মহানাগরিক? মমতা এ বিষয়ে সরাসরি কোনও উত্তর না দিলেও, অতীন ঘোষ, দেবাশিষ কুমার এবং শশী পাঁজার নাম নিয়ে জল্পনা চরমে উঠেছে তৃণমূলের অন্দরে।
এদিন নবান্ন থেকে দমকলের ৫০টি ইঞ্জিন এবং ৪০টি গাড়ির উদ্বোধন করেন মমতা। বিভাগীয় মন্ত্রী হিসাবে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেহালা পূর্বের বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, অনুষ্ঠান শেষ হতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সচিব গৌতম সান্যালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে দেন শোভন।
'ভ্রান্ত তথ্য' দেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শোভনের সম্প্রতি মনোমালিন্য হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। কিছুদিন আগেই তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার সভাপতির পদও খুইয়েছেন দিদির 'কানন'।
উল্লেখ্য, কয়েকমাস আগে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দাম্পত্য কলহ এবং ব্যক্তিগত জীবনের নানা বিষয় নিয়ে সমস্যার কথা প্রকাশ্যে আসে। জানা যায়, এই ঘটনা নিয়েও যারপরনাই বিরক্ত ছিলেন মমতা। শোভনকে তিনি একাধিকবার 'সংশোধনের' সুযোগ দিয়েছিলেন বলেও জানা যায়।