রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ ঘিরে ফের অনিশ্চয়তার কালো মেঘ গাঢ় হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টে সর্বশেষ হলফনামা দিয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই মুহূর্তে সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে গেলে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে৷ অর্থাৎ, হলফনামাতেই রাজ্য সরকার বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে, বকেয়া ডিএ দেওয়ার জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা বর্তমামে নবান্নের কাছে নেই৷ সোচ্চার রাজ্য সরকারি কর্মীদের বিভিন্ন সংগঠন। তুলোধনা করছে বিরোধী দলগুলো। এই পরিস্থিতিতে ডিএ নিয়ে মুখ খুললেন রাজ্যের বর্ষীয়ান মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। ডিএ দেওয়া, নাকি সর্বসাধারণের জন্য রাজ্যের তৈরি একাধিক প্রকল্পের কাজ জারি রাখা? তা বিবেচনার জন্য অগ্রাধিকার যাচাইয়ের কথা শোনালেন কৃষিমন্ত্রী।
কী বলেছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়?
ডিএ সরকারি কর্মীদের অধিকার। আগেই জানিয়েছিল আদালত। এই প্রেক্ষিতে কর্মীদের ডিএ-এর দাবিকে ন্যায্য বলেই মনে করেন মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাহলে কী তিনি ডিএ নিয়ে রাজ্যের দাবির বিরোধী? জবাব দিতে গিয়ে এ দিন বিধানসভায় শোভনদেববাবু অগ্রাধিকারের বিষয়টিকে তুলে ধরেন।
মন্ত্রী বলেছেন, 'রাজ্যে যেসব জনহিতকর প্রকল্প চালু আছে সেগুলো বন্ধ করা যাবে না। বর্তমান আর্ত সামাজিক ব্যবস্থায় সরকারি কর্মীরা যথেষ্ট বেতন পান। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই তো বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত বা দিন -আনা দিন-খাওয়া মানুষ। মুখ্যমন্ত্রীকে সেইসব সাধারণ মানুষের কথা ভাবতেই হয়। যাঁরা ডিএ পাচ্ছেন তাঁরা দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পান। কিন্তু যাঁদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী প্রকল্পগুলি করেছেন, তাঁরা প্রতিদিন বাজারে যেতে পারেন না। দু’বেলা হয়তো ঠিক মতো খেতেও পান না। এদের সরকারকে সাহায্য করতেই হবে। অগ্রাধিকার কী, সেটা বিচার করতে হবে। বাড়তি ডিএ দিলে এখন এইসব উন্নয়ন প্রকল্পের অসুবিধা হবে। সেটা করা যাবে না।'
এরপরই অবশ্য সরকারি কর্মীদের শোভনদেবের আশ্বাস, 'সঠিক সময়ই মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দেবেন। মমতা চান সরকারি কর্মীরা বর্ধিতহারেই ডিএ পান।'
আরও পড়ুন- প্রাপ্য চেয়ে চেয়ে প্রাণপাত নবান্নের, শেষ পর্যন্ত বাংলায় এল কেন্দ্রের টাকা
রাজ্যের বর্ষীয়ান মন্ত্রীর যুক্তিকে কটাক্ষ করেছেন কপেডারেশন অফ গভঃ এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, 'উনি ট্রেড ইউনিয়ান নেতা, কীভাবে কর্মীদের ডিএ নিয়ে এইরকম যুক্তির কথা বলছেন? রাজ্য যতই অভাবের কথা বলুন, কোনও মতেই সরকারি কর্মীদের ডিএ আটকে রাখতে পারবেন না।'
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, 'দেউলিয়া সরকার প্রতিনিয়ত তার প্রমাণ মিলছে। এরা মানুষের অধিকারকে কেড়ে নেয়। শোভনদেববাবু যা বলছেন তাতে মনে করা যায় সরকারি কর্মীরা সবাই বড়লোক। আদতে তা তো নয়। দিদির সরকার যে আদালত থেকে কর্মীদের দাবি-দাওয়াকে পাত্তা দেয় না সেটা এর প্রমাণ।' সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, 'শোভনদেববাবুর কথা আর রাজ্য সরকারের কথা তো এক নয়। এমনকী তৃণমূলও সেটা বলছে না। অপদার্থতা ঢাকতে ওদের যে যা পারছে সেটাই বলে চলেছে।'