মালদার নারী নির্যাতন-কাণ্ডে ২০ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে অব্যাহত পুলিশ সুপার অফিসের সামনে বিজেপির অবস্থান- বিক্ষোভ। রবিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ এই অবস্থান বিক্ষোভে লাঠিচার্জের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় দু'জন বিজেপি মহিলা কর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ।
এরপর থেকে দলে দলে বিজেপি সমর্থিত আদিবাসী কর্মীরা, তীর ধনুক নিয়ে দলীয় সাংসদ খগেন মুর্মুর নেতৃত্বে পুলিশ সুপার অফিসের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভে সামিল হন। সকাল থেকেই টানটান উত্তেজনা রয়েছে মালদার পুলিশ সুপার অফিস চত্বরে। বিশাল পুলিশ বাহিনী সেখানে মোতায়েন রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার টাকা চুরির অভিযোগে দুই মধ্য বয়স্ক মহিলাকে বিবস্ত্র করে গণপিটুনি দেয় কিছু মানুষ। আর এই ঘটনার বিষয়টি গত শুক্রবার রাত থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নির্যাতিতা দুই মহিলা-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ফুটেজ দেখে বাকি হামলাকারীদেরও খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন- হুঁশিয়ারি আগেই দিয়েছিলেন, এবার মমতা-অভিষেকের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ শুভেন্দুর
এরই মধ্যে বিবস্ত্র করে দুই মহিলাকে মারধরের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে ধর্নায় বসেছেন বিজেপির সাংসদ খগেন মুর্মু, হবিবপুরের বিধায়ক জুয়েল মুর্মু সহ দলের জেলা নেতৃত্ব। শনিবার দুপুর থেকে পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে বিজেপির অবস্থান বিক্ষোভ চলছে। শনিবার রাত পেরিয়ে রবিবার সকাল গড়িয়ে গেলেও একইভাবে বিজেপির এই অবস্থান, বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। এরই মধ্যে এদিন সকালে বিজেপির অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচির প্যান্ডেল ঘিরে পুলিশের সঙ্গে বচসা শুরু হয়, সেই বচসাকে কেন্দ্র করেই পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন- মালদা-মণিপুরে তুলনায় ক্ষুব্ধ তৃণমূলের শীর্ষ আদিবাসী নেতা, পাল্টা ভয়ঙ্কর নিদানে তোলপাড়!
উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, 'আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পুলিশ সুপার অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করছিলাম। মাথার ওপর রোদ ছিল বলেই ত্রিপল ঢাকতে গিয়েছিলাম । সেই সময় দলের পুরুষ ও মহিলা কর্মীদের ওপর নির্বিচারে পুলিশ লাঠিপেটা করে। আমাদের দুইজন মহিলা কর্মী জখম হয়েছেন। নারী নির্যাতন কাণ্ডে পুলিশ এখনও সমস্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি। অথচ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান বিক্ষোভ করলেও, আমাদের ওপরই জোর জুলুম করা হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'গত শনিবার থেকে পুলিশ সুপার নিখোঁজ রয়েছেন। এই অফিসে তিনি আসছেন না। আমরাই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েই অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছেও পুলিশের অমানবিক বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে । যতক্ষন না সমস্ত লোকেরা গ্রেফতার হচ্ছে ততক্ষণ আমাদের এই অবস্থান বিক্ষোভ চলবে।' এদিকে পুলিশ লাঠিচার্জের ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে। আদিবাসী নারীদের উপর নির্যাতন কাণ্ডে ইতিমধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
মালদার ঘটনা দাগ কেটেছে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের মনেও। মণিপুরের মত প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে বিবৃতি না-দিলেও গোটা ঘটনাটি বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের কানে গিয়েছে। তাঁরা ভিডিওটি দেখেছেন। এই ব্যাপারে সরব হয়েছেন অনুরাগ ঠাকুর-সহ বিজেপির সর্বভারতীয় নেতারা। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি এরাজ্যে দু'দিনের সফরে এসেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলও। এই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা জানিয়েছেন, 'ভোট আসলেই পশ্চিমবঙ্গে অশান্তি শুরু হয়ে যায়। মানুষের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটে থাকে। সেসব নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তাঁরা দলের সভাপতি জেপি নাড্ডাকে দেবেন। সেই জন্যই পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন।'