বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নজিরবিহীন শাস্তির মুখে পড়লেন। রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বিরোধী দলনেতাকে এমন বেনজির শাস্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। বিধানসভায় গোটা শীতকালীন অধিবেশনজুড়ে সাসপেন্ড করা হয়েছে নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে।
কেন সাসপেন্ড শুভেন্দু অধিকারী?
মঙ্গলবার আলোচনার সময় বিধানসভায় দলত্যাগ ইস্যুতে কথা বলেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যেপাধ্যায়ের আপত্তিতে শঙ্কর ঘোষের সেই বক্তব্য বিধানসভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ পড়ে। এই বিষয়টি নিয়েই কার্যত রে রে করে ওঠেন শুভেন্দু অধিকারী। সংবিধান দিবসে চলা আলোচনায় তাঁরা অংশ নেবেন না বলে হুঁশিয়ারি পর্যন্ত দেন বিরোধী দলনেতা। অধ্যক্ষের দিকে কার্যত তেড়ে যেতে যেতে তুমুল চিৎকার করতে থাকেন শুভেন্দু অধিকারী। পরে বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়করা। বিরোধী দলনেতার এমন আচরণের প্রতিবাদ জানান বিধানসভায় তৃণমূলের উপমুখ্যসচেতক তাপস রায়।
শুভেন্দু অধিকারীকে সাসপেন্ড করা উচিত বলে অধ্যক্ষকে জানান তিনি। অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এরপর আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা বলেন। শুভেন্দু অধিকারীর এমন আচরণ নওশাদ সমর্থন করেন কিনা তা জানতে চান তিনি। নওশাদ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, তিনি শুভেন্দু অধিকারীর এমন আচরণ সমর্থন করেন না। এরপরেই বিরোধী দলনেতাকে গোটা শীতকালীন অধিবেশনের জন্য বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য কী?
"সংবিধানের প্রোটেকশন পাচ্ছি না। সংবিধান দিবসে ভালো ভালো কথা বলছে, কিন্তু এদের সংবিধানের প্রয়োজন নেই। আমরা বিধানসভার ভিতরে বলেছি, এই হাউস সংবিধান মেনে কাজ করছে না। ওদের মন্ত্রীরা মাওবাদীদের সমর্থন করছে, রাষ্ট্রদ্রোহীদের সমর্থন করছে।"
বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এক্সপ্রেস ফটো: পার্থ পাল।
সাসপেন্ড করার আগে শুভেন্দুকে নিয়ে কী বলেছিলেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়?
"এটা অত্যন্ত অবাঞ্ছিত একটি ঘটনা। রাস্তার গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে যেটা করা যায় সেটা বিধানসভায় করা যায় না। এই ধরণের আচরণ বিরোধীদের কখনই করা উচিত নয়।"
আরও পড়ুন- ‘কঠিন ব্যামো’ বালুর? দাঁড়াতে গিয়ে নাকি পড়ে যান, দ্রুত স্থানান্তরিত ICCU-তে
এদিন শুভেন্দু অধিকারীর আচরণের তুমুল সমালোচনায় সরব শাসকদলের মন্ত্রী, বিধায়ক থেকে শুরু করে অন্য নেতারা। সংবাদমাধ্যমে এদিন তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, "বিধানসভার অনেক নিয়ম-নীতি আছে। সবার সেটা বজায় রাখা দরকার। শুভেন্দু অধিকারী যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন না। মুখ্যমন্ত্রীকে তুই-তোকারি করেন। বিধানসভার ভিতরে দাঁড়িয়ে অধ্যক্ষকে অপমান করেছেন। তাঁর শাস্তি ঠিকই হয়েছে।"
তৃণমূলের ধর্না। এক্সপ্রেস ফটো: পার্থ পাল।
আরও পড়ুন- জাল ফেলতেই জলের তলা থেকে বীভৎস টান! তুমুল হইচই সুন্দরবনে! তারপর?
এদিকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আজ বিধানসভার বাইরে ধর্না দিতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল বিধায়কদের। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কেন্দ্রীয় একাধিক প্রকল্পে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিধানসভা চত্বরে শাসকদলের বিধায়করা ধর্না দেবেন বলে জানা গিয়েছে।