করোনার পর এবার আতঙ্কের আর এক নাম অ্যাডিনোভাইরাস। শহর থেকে জেলা, দিন যত এগোচ্ছে অ্যাডিনোভাইরাসের থাবা ততই চওড়া হচ্ছে। রাজ্যের একাধিক জেলার হাসপাতালগুলিতে জ্বর-সর্দি-কাশির সমস্যা নিয়ে কচিকাঁচাদের ভিড় বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্তও ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত তৎপরতা নিয়েছে রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্য ভবনের তরফে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে হাসপাতালগুলিকে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রীতিমতো গাইডলাইন বেঁধে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
বর্তমান আবহে বাবা-মায়েরা তাঁদের শিশুদের নিয়ে বেশ উদ্বেগে রয়েছেন। শিশুদের ক্ষেত্রে অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ বুঝবেন কী করে? কোনও শিশু জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগলে বাড়ির বড়দের এই পরিস্থিতিতে কী কী করণীয়, এসব নিয়েই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক শাশ্বত আচার্য। অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় বেশ কিছু মূল্যবান পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক।
করোনার দোসর হয়ে ঘুম কাড়ছে অ্যাডিনোভাইরাস। ইতিমধ্যেই কলকাতার পাশাপাশি একাধিক জেলাতেও এই ভাইরাসে আক্রান্তের তালিকা দীর্ঘ হতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, এরাজ্যে অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপ ছড়াতে শুরু করে গত ডিসেম্বর মাসের শেষ দিক থেকে। এই ভাইরাসে শিশুরাই বেশিমাত্রায় আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে দুই থেকে তিন বছর বয়সী শিশুদেরই বেশি কাবু করছে এই ভাইরাস।
শিশুদের মধ্যে কী কী উপসর্গ দেখলে সতর্ক হতে হবে?
এই বিষয়ে বিশিষ্ট চিকিৎসক শাশ্বত আচার্য বলেন, 'বাচ্চাদের চোখ লাল হয়ে যেতে পারে, নাক দিয়ে জলও পড়তে পারে। এরই সঙ্গে থাকে জ্বর। বাচ্চারা ঝিমিয়ে পড়তে পারে। খাওয়ার ইচ্ছাও চলে যায়। তবে শুধু অ্যাডিনো নয়। এখন সিজিনাল আরও কিছু ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। আরএসডি ভাইরাসেও অনেকে কাবু হচ্ছে। লক্ষ্ণণ মোটের উপর এক। এই ধরনের ভাইরাসগুলি শ্বাসন্ত্রের উপরিভাগকে সংক্রমিত করছে। গলা-নাকে ছড়াচ্ছে। করোনায় ফুসফুস বেশিমাত্রায় সংক্রমিত হয়েছিল। অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদেরও শ্বাসকষ্ট তৈরি হচ্ছে।'
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কী কী করণীয়?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কথায়, 'জ্বর, চোখ লাল বা নাক থেকে জল পড়ার সমস্যা হলে বাচ্চাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়াতে হবে। জ্বর বাড়লেই প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে। তবে ৩-৪ দিন পরেও জ্বর না কমলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বাড়ির বয়স্কদেরও অ্যাডিনোভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।'
এদিকে, করোনার পর এবার অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে রীতিমতো সতর্ক স্বাস্থ্য ভবন। রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতির উপরেই নজর রাখা হচ্ছে। রাজ্যের সব জেলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। হাসপাতালগুলিকে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য আধিকারিককে হোয়াটস্যপে ও ইমেলে প্রতিদিনের রোগীর হিসেব দিতে বলা হয়েছে। জেলার প্রতিটি হাসপাতালে শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ অথবা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন নিয়ে কোন বিভাগে কত শিশু ভর্তি রয়েছে তার হিসেব দিতে বলা হয়েছে।