রাণী সোরেন। কোলে এক বছর তিন মাসের কঙ্কন। সঙ্গে এসেছেন স্বামী কান্তলাল হেমব্রম। বাড়ি বাঁকুড়ার তালডাংড়ায়। বৃহস্পতিবার থেকে রাণীদেবী অনশন করছেন ধর্মতলায় কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায়। এই আদিবাসী মহিলার দাবি, তাঁকে স্কুল সার্ভিস কমিশন অথবা এসএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগ করতে হবে রাজ্য সরকারকে। এসটি ওয়েটিং লিস্টে আছেন, প্যানেল-ভুক্ত করতে হবে শিক্ষা দপ্তরকে। সাড়া না পেলে অনশন করে যাবেন অনির্দিষ্টকালের জন্য।
এসএসসি-র মাধ্যমে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে অনশনে বসেছেন সাড়ে তিনশোজন। ছবি: শশী ঘোষ
ছোট্ট কঙ্কন কখনও মায়ের কোলে, কখনো গুটিগুটি পায়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। সে জানেও না বাড়ি থেকে কত দূরে রাস্তায় দিন কাটাচ্ছে। এখন মেয়ো রোডের সামনে এই রাস্তাই ঠিকানা কান্তলাল হেমব্রমের ছোট পরিবারের।
বিপিইএড পাস রাণী সোরেন শুধু নন, একইসঙ্গে সাড়ে তিনশোজন লাগাতার অনশনে বসেছেন এসএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগের দাবিতে। তাঁদের মধ্যে ৫০ জন জলস্পর্শ পর্যন্ত করেন নি। ইতিমধ্যে দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একজনের আবার গর্ভাবস্থা। উত্তর ২৪ পরগণার গাইঘাটার প্রকাশ ঘোষ, মুর্শিদাবাদের সুমন সরকার, দক্ষিণ দিনাজপুরের ওয়াসিম রেজা সহ সবার ঘর এখন রাস্তায়।
অনশন পড়েছে তৃতীয় দিনে। ছবি: শশী ঘোষ
কাদের নেতৃত্বে আন্দোলন?
অনশনকারীদের আন্দোলন দানা বাঁধার পিছনে কোনও রাজনৈতিক ইন্ধন নেই বলেই তাঁদের দাবি। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মত সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরেই এই সংগঠন তৈরি হয়েছে। 'এসএসসি যুব-ছাত্র অধিকার মঞ্চ' গঠন করে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে পথে নেমেছেন সদস্যরা। অনশন মঞ্চে যোগ দিয়েছেন সাড়ে তিনশোজন।
কেন এই অনশন?
আন্দোলনকারীদের দাবি, কোনও মেরিট তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতি হচ্ছে। ইন্টারভিউতে ডাকার কোনও অনুপাত মানা হয়নি। রাজ্যে ৬০-৭০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য থাকলেও কোনও নিয়োগ করছে না রাজ্য সরকার। ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার পর কেন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে? প্রশ্ন আন্দোলনকারীদের। সেই প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি এবং কর্মশিক্ষা ও শরীরশিক্ষার প্রার্থীদের প্যানেলভুক্ত করতে হবে।
দাবি না মিটলে অনশন চলবে অনির্দিষ্টকাল। ছবি: শশী ঘোষ
র্যাঙ্ক নয়, জানতে চান নম্বরও
২০১৩ সালের পর কোনও নিয়োগ হয়নি। ২০১৬-তে পরীক্ষা হয় এসএসসির বিজ্ঞপ্তি। ২০১৭ সালে লিখিত পরীক্ষার ফলপ্রকাশ। ইন্টারভিউ হয় ২০১৭-র শেষের দিকে। ২০১৮ -তে ফাইনাল র্যাঙ্ক প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কোনও স্কোর দেওয়া হয়নি। কে কত নম্বর পেয়েছেন, তার 'ব্রেক-আপ' দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রার্থীরা। ২০১৬ সালেও বলা হয় ১২,৯০০ টি শূন্য পদ রয়েছে এসএসসিতে। এখনও সংখ্যাটা তাই রয়েছে। তা "একেবারে মিথ্যা" বলেই আন্দোলনকারীদের দাবি।
আন্দোলনকারীরা তাঁদের দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। তিনি দেখা করতে না চাইলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করবেন। অনশনকারীরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে পুলিশ যোগাযোগ করিয়ে দেবে বলেছে। তবে অনশনকারীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেও একইসঙ্গে অনশন চলবে। দাবি না মিটলে অনশন চলতে থাকবে অনির্দিষ্টকালের জন্য। এদিকে এসএসসিতে দুর্নীতির অভিযোগ মানতে নারাজ কর্তৃপক্ষ, কাজেই সমস্যার সমাধান খুব সহজ নাও হতে পারে।