দেখতে অনেকটা বিশালাকৃতি লাউয়ের মতো। এক সময় মালদার (তৎকালীন গৌড় রাজ্য) মোঘল আমলের নবাবদের প্রিয় ছিল এই বেগুন। নবাবদের নির্দেশেই তাঁদের প্রাসাদের সীমানায় চাষিরা এই বেগুন চাষ করতেন। যার থেকেই নাম হয়েছে নবাবগঞ্জের বেগুন।
নবাবগঞ্জের বেগুনের কদরই আলাদা। শীতের মরশুমেই শুধু পাওয়া যায় এই জাতের বেগুন। যা দিয়ে বেগুনভর্তা, বেগুন পোড়া, বেগুন ভাজা, বেগুন পোস্ত, বেগুনের অন্যন্য তরকারি-সহ রকমারি রান্না করে থাকেন অনেকে। এই বেগুন কিনতেই আশেপাশের জেলা ও ভিন রাজ্য থেকেও বহু খাদ্যরসিক মানুষ ছুটে যান মালদায়।
ব্যাপক হারে এই নবাবগঞ্জের বেগুনের চাহিদা থাকায় এবছর দামও খানিকটা বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে ৭০ থেকে ১০০ টাকা কিলো দরে বিক্রি হচ্ছে মালদার বিখ্যাত নবাবগঞ্জের বেগুন। উল্লেখ্য, একটি বেগুনের ওজন ন্যূনতম ৮০০ গ্রাম থেকে দু'কেজি পর্যন্ত হয়। বিশাল এই বেগুন শুধুমাত্র মালদার চাঁচোলের পুখুরিয়ার রাজাপুরে মূলত চাষ হয়।
আরও পড়ুন Premium: ‘তারার ছায়া’য় স্মৃতির সমাহার, অপূর্ব-কীর্তিতে চাগিয়ে উঠছে ইতিহাস-প্রেম
এছাড়াও ওই গ্রামের পার্শ্ববর্তী পুরাতন মালদা ব্লকের মহিষবাথানি, গাজোলের পাণ্ডুয়ায় কিছু পরিমাণ জমিতে এই বেগুনের চাষ হয়। এই বেগুনের নাম নবাবগঞ্জের বেগুন। এই প্রজাতির বেগুন আর অন্য কোথাও চাষ হয় না। এই এলাকার কৃষকেরাই চাষ করেন। প্রতিবছর কৃষকেরা বেগুনের বীজ সংরক্ষণ করে রাখেন।
পরবর্তী সময়ে সেই বীজ বপন করেন কৃষকেরা নিজেই। এই প্রজাতির বেগুনের বীজ কোথাও কিনতেও পাওয়া যায় না। প্রাচীনকাল থেকেই এই বেগুনের চাষ হয়ে আসছে মালদায়, এমনটাই দাবি কৃষকদের। বর্তমানে ইংরেজবাজার শহরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে নবাবগঞ্জের বেগুন। একটি বেগুনের ওজনও যেমন বেশি তেমন দামও চড়া। তাই ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই এই বেগুন কেনেন না।
মালদা জেলা উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার তিনটি ব্লকের বেশ কিছু গ্রাম মিলিয়ে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে এই বেগুন বর্তমানে চাষ হচ্ছে।
আরও পড়ুন- ধনকড়-পর্ব এখনও টাটকা! ফের মিমিক্রি কল্যাণের, এবার নিশানায় প্রধানমন্ত্রী!
মালদা ছাড়া অন্য কোথাও এই বেগুন চাষ না হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে এখানকার মাটি। পুখুরিয়ার রাজাপুরের নবাবগঞ্জ বেগুন চাষি রহিম শেখ বলেন, "এই জাতের বেগুনের সঙ্গে মালদার প্রাচীন ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। একটা সময় নবাবেরাই এই বেগুন খেতে পছন্দ করতেন। পরবর্তী সময়ে রাজার রাজত্ব শেষ হয়ে যায়। এরপর পুরাতন মালদার নবাবগঞ্জে শুধুমাত্র এই বেগুনের হাটই বসতো। সেই থেকেই আজও মালদার নবাবগঞ্জের বেগুন বিখ্যাত। সরকার এবং প্রশাসন যদি এই জাতের বেগুন উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়, তাহলে অনেক চাষিই আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হতে পারবেন।"