গঙ্গার ভাঙন রোধে এবার এগিয়ে এল চন্দননগর গভর্মেন্ট কলেজ। ১৮৬২ সালে তৈরি হওয়া এই কলেজ রাজ্যের প্রাচীনতম সরকারি কলেজগুলির একটি। ডুপ্লে কলেজ নামেই এলাকায় পরিচিত এই প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নদীর পাড়ের ভাঙন রোধে ম্যানগ্রোভের চারা পুঁতে দিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের এই কাজে সহযোগিতা করেছেন কলেজের অধ্যাপকরাও।
গত কয়েক বছর ধরে চন্দননগরে গঙ্গার পাড় ভাঙছে। বিশেষ করে চন্দননগর পাতালবাড়ির কাছে এই ভাঙন ব্যাপক আকার নিয়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত এই পাতালবাড়ির কাছেই রয়েছে চন্দননগর কলেজ। ঐতিহ্যশালী স্ট্র্যান্ড রোডের ধারে এই কলেজের কাছ দিয়েই বয়ে চলেছে গঙ্গা নদী। গত কয়েকমাস ধরে কলেজের কিছু পড়ুয়া অধ্যাপকদের সাহায্যে গঙ্গা পাড়ের ভাঙন রোধ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন। কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস সরকারের তত্ত্বাবধানে সুন্দরবনের গোসাবা থেকে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির কিছু গাছের চারা এনে গঙ্গা নদীর ধারে রোপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গঙ্গা পাড়ের রানিঘাট-পাতালবাড়ি পর্যন্ত স্ট্র্যান্ডরোডের পাশে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকায় তিনটি সারিতে মোট ২৫০টি চারা গাছ রোপন করা হয়। গাছ পোঁতার কাজে হাত লাগিয়েছিলেন কলেজের অধ্যাপক ও ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে শহরের বিশিষ্টজনেরাও। মহতী এই উদ্যোগে সামিল ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস সরকার এবং এলাকার ম্যানগ্রোভম্যান নামে খ্যাত উমাশঙ্কর মণ্ডলও। এই বিষয়ে দেবাশিস সরকার বলেন, ''আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বৃক্ষের চারা আনা। ৩৪ ধরণের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ আছে। এখানে ৬ ধরনের প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে।''
সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া, বাইন গাছ লাগানো হয়েছে নদীর পাড়ে। সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই ৬ ধরনের প্রজাতির ২৫০টি গাছের চারা আনা হয়। চন্দননগর গভর্মেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস সরকার জানিয়েছেন, বেলা ১১ টার পর গঙ্গায় জোয়ার আসে। জোয়ারের আগেই চারা গাছ গুলি রোপন করা ছিল একটা মস্ত চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ''আমরা সকাল সাড়ে দশটার মধ্যেই গাছ লাগানোর কাজ শেষ করতে চাইছিলাম। এক্ষেত্রে সুন্দরবন থেকে আসা কয়েকজন যথেষ্ট সাহায্য করেছেন।''
আরও পড়ুন- আনিস খানের ভাইকে খুনের চেষ্টা, বাড়িতে ঢুকে ধারালো অস্ত্রের কোপ
সুন্দরবনের নোনা জলেই সাধারণত ম্যানগ্রোভ অরণ্য বেড়ে ওঠে। সেটা গঙ্গার এই মিঠা জলেও কি সম্ভব? এবিষয়ে অধ্যাপক সরকার জানান, ''আমরা যথেষ্ট অনুসন্ধান করে দেখেছি যে মিঠা জলে ম্যানগ্রোভ হয় না, এই ভাবনা ভিত্তিহীন। আমরা সয়েল টেস্টও করেছি।''
আরও পড়ুন- বেলা বাড়লেই আমূল বদল আবহাওয়ায়, একাধিক জেলায় মুষলধারে বৃষ্টির সম্ভাবনা
আগামী কয়েক মাস ওই চারাগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। মাস তিনেকের মধ্যে ওই চারা গুলি বেড়ে যাবে। নদীর পাড়ে লাগানো এই ম্যানগ্রোভের চারা বেড়ে উঠে বৃক্ষে পরিণত হলে তার ফল মাটিতে পড়ে আরও গাছ হবে। চন্দননগর গর্ভনমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, ওই গাছগুলির ফল থেকে আয়ুর্বেদিক ওষুধও তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।