শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উত্তেজনা ছাড়ল। রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালের আচার্য সিভি আনন্দ বোসের গাড়ি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ৫ নম্বর গেট দিয়ে চত্বরে পৌঁছলেই তা ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন এক দল পড়ুয়া। ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন। সমাবর্তন অনুষ্ঠাণে আচার্যের ভাষণের সময়ও চলে বিক্ষোভ, স্লোগান।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের পড়ুয়ারা। সেই আঁচ পড়েছে যাদবপুরেও। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ২০২০ সালে শেষ ছাত্র সংসদের ভোট হয়েছিল। এরপর আর নির্বাচন হয়নি। প্রায় তিন বছর অতিক্রান্ত। কিন্তু, প্রশাসন এই ভোট করাতে দিচ্ছে না। এক আন্দোলনকারী বলেন, 'কর্তৃপক্ষ অগণতান্ত্রিকভাবে সব নীতি আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। পড়ুয়াদের ইউনিয়নকে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা আমরা মানব না। আমাদের স্পষ্ট দাবি, অবিলম্বে ইউনিয়ন ইলেকশন করতে হবে। এটা পড়ুয়াদের অধিকার।'
শুরুতেই রাজ্যপাল বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের দু'জনকে ডেকে নেন আচার্য সিভি আনন্দ বোস। তাঁর উপর আস্থা রাখার জন্য পড়ুয়াদের বলেছেন তিনি। পড়ুয়াদের দাবি, রাজ্যপাল বলেছেন, 'যা করার করব।'
২০১৪ বা ২১ সালেও নানা ইস্যুতে সমাবর্তনে যাদবপুরে বিক্ষোভ ছড়িয়েছিল। 'হোক কলরব' বছরে সমাবর্তনে মঞ্চ উঠে ডিগ্রি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন গীতশ্রী সরকার নামে এক ছাত্রী। ২১ সালে সিএএ-র প্রতিবাদে সমাবর্তন মঞ্চে স্বর্ণপদক নিতে গিয়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি ছিঁড়েছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী দেবস্মিতা।
তবে এদিন আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের দাবি, বিক্ষোভের মাধ্যমে রাজ্যপালকে অসম্মান নয়, বরং দাবি দাওয়া পৌঁছে দিতেই তাঁদের স্লোগান দেওয়ার কর্মসূচি।
এদিনের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহঃ সেলিম বলেছেন, 'কলেজ, বিশ্ববিদ্য়ালয় কেন ছাত্র সংসদ ভোট হবে না? আসলে ভোট হলেই বামপন্থীরা জিতবে। সেটাই তৃণমূলের ভয়। রাজ্যের সাবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল। তিনিই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তাই তাঁর সামনে নিজেদের দাবি তুলে ধরায় কোনও অন্যায় নেই।' যদিও উল্টো মত রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের। তিনি বলেছেন, 'রাজ্যপালকে বাধা দিয়ে অন্যায় করেছে পড়ুয়ারা। ছাত্র সংসদ ভোট হচ্ছে না বলে রাজ্যপালকে ডেপুটেশন দেওয়া যেত। কিন্তু, তাঁর গাড়ি আটকানো, বিক্ষোভ দেখিয়এ প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান তোলার কাজ ঠিক নয়।'
সম্প্রতি ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবিতে উত্তাল হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। পড়ুয়াদের একাংশ নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘ ১২ দিন ধরে অনশন চালান। এর পর অনশন প্রত্যাহার করে আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা নিজেরাই সংসদ ভোট করান। তবে প্রশানের মান্যতা না থাকায় এই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।