অদম্য জেদকে সঙ্গী করেই প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় হারিয়েছেন, স্কুল কামাই ডায়েরিতেই নেই স্যারের

মাস্টারমশাইকে স্কুলে নিয়ে যাওয়াটা ছোট-ছোট পড়ুয়াদের কাছেও যেন এক পরম 'সৌভাগ্যে'র ব্যাপার।

মাস্টারমশাইকে স্কুলে নিয়ে যাওয়াটা ছোট-ছোট পড়ুয়াদের কাছেও যেন এক পরম 'সৌভাগ্যে'র ব্যাপার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
students show their respect on teachers day 2022 to sanjay goswami

পানাগড় রেল কলোনি স্কুলের শিক্ষক সঞ্জয় কুমার গোস্বামী। ছবি: অনির্বাণ কর্মকার।

শিক্ষকতার জীবনটা শুরু করেছিলেন সেই ২০০৫ সালে। সেই থেকে আজও স্কুলই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। স্কুল কামাই তাঁর ডায়েরিতেই নেই।
রোজ সকালে হয় বোন কিংবা কোনও না কোনও ছাত্রছাত্রী হাত ধরে তাঁকে নিয়ে যান স্কুলে। মাস্টারমশাইকে স্কুলে নিয়ে যাওয়াটা ছোট-ছোট পড়ুয়াদের কাছেও যেন এক পরম 'সৌভাগ্যে'র ব্যাপার। কোন দিন কে স্যারকে স্কুলে নিয়ে যাবে, তা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে রীতিমতো চলে 'প্রতিযোগিতা'।

Advertisment

সঞ্জয় কুমার গোস্বামী, জন্ম থেকেই দু'টো চোখেই দেখতে পান না এই ব্যক্তি। পানাগড় রেল কলোনি হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষক সঞ্জয়বাবু। ছাত্রছাত্রীরা তো বটেই স্কুলের বাকি শিক্ষকরাও সঞ্জয় গোস্বামীকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখেন, ভালোওবাসেন। ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজি পড়ানোর পাশাপাশি তাঁদের নিয়ে আবৃত্তি, নাচ-গানের তালিমও দেন সঞ্জয় গোস্বামী।

কলকাতার ব্লাইন্ড স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি। প্রবল প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করে ছোট থেকেই অদম্য জেদ নিয়ে লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছেন। পড়াশোনার পাঠ শেষ করে শিক্ষকতা করবেন বলেই ভেবেছিলেন তিনি। প্রথমে মাধ্যমিক, তারপর কৃতিত্বের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। পরে এসএসসি পাশ করে চাকরি পান পানাগড় রেল কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই স্কুলেই ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন সঞ্জয় গোস্বামী। ২০০৫-এ স্কুলের চাকরিতে যোগ দিয়ে আজও কর্তব্যে অবিচল প্রৌঢ়।

আরও পড়ুন- ‘অনেক হয়েছে আর নয়’, রাজনীতি ছাড়তে চান তৃণমূলের এই বর্ষীয়ান বিধায়ক

Advertisment

পড়ানোর পাশাপাশি কম্পিউটারেও সমান দক্ষ সঞ্জয় গোস্বামী। তাঁর মতো এক ব্যক্তিকে সহকর্মী হিসেবে পেয়ে গর্বিত স্কুলের অন্য শিক্ষকরাও। পানাগড় রেল কলোনি হাইস্কুলের শিক্ষক অরূপ কুমার নন্দী বলেন, ''একজন আদর্শ শিক্ষকের যা যা গুণ থাকা উচিত, তার সবগুলিই রয়েছে তাঁর মধ্যে।''

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাধব চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, ''চোখে দেখতে না পেলেও তাঁর অন্যান্য অঙ্গ অতি সক্রিয়।
বিদ্যালয়ে কবে কোন দিন কি অনুষ্ঠান হয়েছিল বা ছাত্র-ছাত্রীদের নাম তাঁর ঠোঁটে। বিদ্যালয়ে কারও কোনও বিষয়ে সমস্যা হলে সবাই আগে তাঁর কাছেই ছুটে যান। স্কুলের খুঁটিনাটি সব বিষয়েই যাবতীয় তথ্য তাঁর মস্তিষ্কে রয়েছে। শুধু ব্ল্যাক বোর্ডে তিনি লেখেন না। সেই দায়িত্ব ক্লাসেরই কোনও ছাত্র-ছাত্রীকে তিনি পালন করতে বলেন।''

West Bengal Teachers Day