যাঁর সরকারের বিরুদ্ধে তিনি নন্দীগ্রামে জমিরক্ষার আন্দোলন করেছিলেন। যে নন্দীগ্রাম আন্দোলন বঙ্গ এবং ভারতীয় রাজনীতিকে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে। সেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে 'অতি বিরল' এবং 'সৎ' রাজনীতিবিদ তকমা দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মত এমন 'অতি বিরল' এবং 'সৎ' রাজনীতিবিদ পশ্চিমবঙ্গে আরও একজন তৈরি হবেন কি না, সেই প্রশ্নও তুললেন তিনি। রবিবার দক্ষিণ কলকাতার যে বেসরকারি হাসপাতালে রাজ্যর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভর্তি আছেন, সেখানে দেখতে গিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে শুভেন্দু অধিকারী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, 'যাঁরা আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, তাঁরা ভগবানের কাছে প্রার্থনা করব, এরকম একজন সৎ, রাজনীতিবিদ পশ্চিমবঙ্গের দলমত, বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের শ্রদ্ধার ব্যক্তি। তিনি যেন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন। আমি এককথায় বলতে পারি। আমি ওঁনার সময়ে বিধায়ক ছিলাম। এমন সৎ রাজনীতিবিদ পশ্চিমবঙ্গে বিরল, অতি বিরল। অতি বিরল। একের বদলে দুই হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।'
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস হামেশাই বাম-বিজেপির বিরুদ্ধে রাম-বাম জোটের অভিযোগ করে থাকে। রবিবার তাকেই কার্যত উসকে দিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অকুণ্ঠ প্রশংসার আগে শনিবার রাতেই হাসপাতালে গিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনিও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখে এসেছেন।
তবে, রবিবার সেসব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে, 'পশ্চিমবঙ্গের দলমত, বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের শ্রদ্ধার ব্যক্তি', 'বিরল সৎ ব্যক্তি' এমন বিরল মন্তব্যের পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'আমি ওনাকে কাচের বাইরে থেকে দেখেছি। আমি ওঁনাকে দর্শন করতে পেরেছি। ওঁনার সব মেশিনপত্র চলছে। ওঁনার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। প্রায় পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে সেসব পর্যবেক্ষণ করেছি। ডাক্তারবাবুরা খুবই সহযোগিতা করেছেন। পার্টির যাঁরা সহকর্মী আছেন, সম্মানীয় রবীন দেব-সহ তাঁরা আমাকে সমস্তটা বুঝিয়েছেন। যাবতীয় কিছু বলেছেন।'
শনিবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরপরই দক্ষিণ কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে ছুটে যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসায় ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। রবিবার কার্যত তারই রেশ ধরে রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে বলতে শোনা যায়, 'এখানে সর্বোচ্চ চিকিৎসা, যেটা গতকাল রাজ্যপাল বলেছেন, সেই সেরা চিকিৎসা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পাচ্ছেন। ডাক্তারবাবুরা ২৪ ঘণ্টা চেষ্টা করছেন। আমি ডাক্তারবাবুদের সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলেছি। উনাকে দেখভালের দায়িত্ব পার্টির যে কলিগ ও কমরেডরা আছেন, তাঁরাও সেখানে ছিলেন। ডাক্তাররা বলছেন অক্সিজেন লেভেলটা ঠিক করতে পেরেছেন। কিছু কিছু জিনিসের মাত্রা ঠিক করেছেন। কিছুটা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে আমাকে বলেছেন। বাকিটা ডাক্তারবাবুদের ওপর আমাদের ভরসা রাখা উচিত।'