একদিকে যখন দলের শীর্ষনেতা ও বর্ষীয়ান সাংসদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন বর্ষীয়ান বিধায়ক, ঠিক তখনই দলনেত্রীর সঙ্গে মঞ্চে প্রথম সারিতে সেই সাংসদ। শুধু তাই নয়, সাংসদ-পত্নী বিধায়িকাও মঞ্চের মধ্যমণি। তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় যখন লোকসভায় দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন, সেই সময় ভবানীপুরে বিজয়া সম্মিলনীতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিছনেই প্রথম সারিতে বসে সুদীপ এবং তাঁর স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন সুদীপ-ঘনিষ্ঠ বিধায়ক বিবেক গুপ্তাও। তবে কি সুদীপ-নয়নাকে কাছে রেখে মমতা বুঝিয়ে দিলেন, তাপসের সঙ্গে নেই তিনি?
লক্ষ্মীবারে উত্তীর্ণ অডিটোরিয়ামে ভবানীপুরের বিজয়া সম্মিলনীতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে দেখা গেল মঞ্চে দলনেত্রীর ঠিক পিছনেই বসে সুদীপ, নয়না, বিবেক গুপ্তারা। অথচ এই বিজয়া সম্মিলনীতে ছিলেন না তাপস রায়। যিনি কি না সুদীপের বিরুদ্ধে দলবিরোধী কাজের অভিযোগ করে যাচ্ছেন। তা-ও আবার প্রকাশ্যে। বৃহস্পতিবারও তাপস বলেছেন, তিনি তাঁর অবস্থানে অনড়। নিজের কথা তিনি ফিরিয়ে নেবেন না। তবে এদিন যেভাবে মঞ্চে সুদীপ আগে বক্তব্য রাখলেন বা নয়নাকে স্নেহ করতে দেখা গেল মমতাকে, তাতে তাপসের অস্বস্তি বাড়তে পারে।
যদিও সুদীপ দলের শীর্ষ নেতা, গুরুত্বপূর্ণ সাংসদ, লোকসভায় দলের দলনেতা। তাঁর উপস্থিতি স্বাভাবিক মনে করছে নেতৃত্ব। কিন্তু নয়নাকে বিশেষ স্নেহ দেখানোয় মমতার উদ্দেশ্য দেখছে রাজনৈতিক মহল। এইভাবেই বিদ্রোহী তাপসকে বার্তা দিতে চাইলেন নেত্রী, মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আবার সুদীপ ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিতি জোড়াসাঁকোর বিধায়ক বিবেক গুপ্তার উপস্থিতিও নজরে পড়েছে। কদিন আগে পুজোর উদ্বোধনে প্রকাশ্যে তাঁর সঙ্গে তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বক্সির হাতাহাতি নিয়ে দলের অস্বস্তি বেড়েছিল।
আরও পড়ুন তমোঘ্নর বাড়িতে তাঁর সঙ্গে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ হয়েছিল? অকপট শুভেন্দু
গত কয়েক দিন ধরেই তোপ দেগে চলেছেন বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়। উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি থেকে তাঁকে সরিয়ে ওই পদে দল ফের বসিয়েছে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কয়েক মাসের জন্য তাঁকে মন্ত্রিত্ব দিয়েছিল, তা-ও খোয়া গিয়েছে। সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনায় দলের জেলা সভাপতি হিসাবে তাঁর নাম বিবেচনায় ছিল। কিন্তু ওই পদ নিতে তিনি নারাজ বলেই জানা গিয়েছে। কিন্তু গোঁসা যায়নি তাপস রায়ের। তিনি এবার বিজেপি যোগের অভিযোগ এনেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। এমনকী দলের বহু নেতার শরীর-বুদ্ধিবত্তা কাজ না করা সত্বেও দলের পদে থেকে যাচ্ছেন বলেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি।
মঙ্গলবার নিজের বাড়িতে বসে তাপস রায়ের দাবি করেছিলেন যে, ‘এ বার দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন তমোঘ্ন ঘোষের বাড়িতে আমন্ত্রিত ছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিমন্ত্রিতদের তালিকায় ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী ও কল্যাণ চৌবেও। প্রত্যেকেই পুজোর এক দিন সেখানে গিয়েছিলেন।’ সুদীপকে ঠেস দিয়ে তাপসের দাবি, ‘তমোঘ্নকে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি করতে চেয়ে ওঁকে দলনেত্রীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন সুদীপ। দরবারও করেছিলেন। এ কথা তো দলের সবারই জানা আছে।’
আরও পড়ুন দাদা তথাগতর বাড়িতে যান না সৌগত, সুদীপকে কটাক্ষ বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদের, আক্রমণ মদনেরও
তারপরই তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলেছিলেন, ‘পার্টিতে এই মুহূর্তে ডেডিকেটেড লয়ালিস্ট আর ডিভাইডেড লয়ালিস্ট – দুই ভাগ হয়েছে। ডিভাইডেড লয়ালিস্টরা অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এদিকে দলনেত্রীকে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে দলেরই অনেকে ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে সঙ্গে বিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে সংগঠনের প্রতি অনুগত দলের উচিত তাঁদের প্রতি আস্থা রাখা।’ তাপসের এমন শব্দবাণের মধ্যেই দলনেত্রীর পাশে দেখা গেল সুদীপ-নয়নাকে। তা নিয়েই রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন, এতে কি তাপসের জ্বালা বাড়বে? না কি এবারের মতো রণে ভঙ্গ দেবেন বরানগরের বিধায়ক! সব সময়ই বলবে।