DRDO: দিনমজুরের ছেলের এ যেন আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন সত্যি হল। ছোটবেলা থেকে যে অদম্য ইচ্ছা মনে মনে পুষে রেখেছিলেন এই যুবক তা এতদিনে সত্যি হল। ছেলের নজিরবিহীন এই সাফল্যে আজ বুক চওড়া পেশায় রাজমিস্ত্রি বাবার। বিড়ি বেঁধে সংসারের হাল ফেরানোর স্বপ্নে বুঁদ মায়ের চোখেও আজ আনন্দাশ্রু।
দেশের সুরক্ষা ক্ষেত্রে নিজেকে সামিল করার স্বপ্ন ছিল ছোটো থেকেই। চরম দারিদ্র্যতার সঙ্গে মুখ বুজে লড়াই করে এতদিনে স্বপ্ন পূরণ হল পাঁশকুড়ার (Panskura) সুদীপ মাইতির (Sudip Maity)। সুদীপ সুযোগ পেয়েছেন দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা DRDO-তে। পাঁশকুড়ার (Panskura) পুরুষোত্তমপুর পঞ্চায়েতের মহম্মদ মুরাদ মাইতি পাড়া এলাকার বাসিন্দা সুদীপ মাইতি। বৃদ্ধ বাবা গোবিন্দ মাইতি পেশায় রাজমিস্ত্রি।
তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার গোবিন্দ মাইতির। জীবনভর একের পর এক অট্টালিকা নির্মাণের কাজে যুক্ত থাকলেও অভাবের তাড়নায় নিজের একটা পাকা ঘরও তিনি তৈরি করে উঠতে পারেননি। তবে কঠিন এই লড়াইয়ে সর্বোতভাবে গোবিন্দবাবু পাশে পেয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী নীলিমাদেবীকে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ মেটাতে তিনিও বিড়ি বাঁধেন।
এভাবেই দুই মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন মাইতি দম্পতি। শত দারিদ্র্যতাতেও জোটেনি সরকারি আবাস যোজনার (Pradhan Mantri Awas Yojana) বাড়ি। তাই শতচ্ছিন্ন ত্রিপল ঘেরা বাড়িতেই আজও সপরিবারে বসবাস করেন সুদীপ ও তাঁর বাবা-মা। এই ঘুপচি ঘরের সুদীপই এবার DRDO-তে সুযোগ পেয়েছেন।
সুদীপের পড়াশোনায় হাতেখড়ি পাঁশকুড়ার চক দুর্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। তবে ছোট থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন সুদীপ। বিজ্ঞান (Science) নিয়ে পূর্ব চিলকা লালচাঁদ হাই স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিকে (Higher Secondary Examination) ৭০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেন তিনি।
পরে শিয়ালদহের (Sealdah) পলিটেকনিক কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং তার উপর ডিপ্লোমা করেন। এরপর কলকাতার একটি বেসরকারি কলেজ থেকে বি-টেক (BTech) সম্পূর্ণ করেন তিনি। বর্তমানে আইআইটি গুয়াহাটিতে (IIT Guwahati) এমটেক-এ (M Tech) পাঠরত সুদীপ। লক্ষ্য ছিল একটাই। দেশের সুরক্ষার প্রশ্নে DRDO-তে যোগদান করা।
অবশেষে মিলল সেই সুযোগ। ত্রিপল ঘেরা পাঁশকুড়ার এই হত দরিদ্র পরিবারের ছেলেটি চলতি বছরের শুরুতেই DRDO দেরাদুন থেকে জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপের জন্য ডাক পেয়েছেন। আর সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই খুশির হওয়া আত্মীয় পরিজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে।
সুদীপের কথায়, "গত বছর আচমকা দুর্ঘটনার জেরে কোমর ভেঙেছে বাবার। বাবা আর কাজ করতে পারেন না। সংসার চালাতে মা এখনও বিড়ি বাঁধেন। আমাদের মাথার উপর ছাদটুকুও নেই। তবুও স্বপ্ন ছিল দেশের সুরক্ষার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করব। সেই লক্ষ্যে এখন অনেকটাই সফল হতে পেরে খুশি।" সুদীপের এই কঠিন লড়াইয়ে বেশ খানিকটা আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন চিলকা লালচাঁদ হাই স্কুলের শিক্ষক শান্তনু চক্রবর্তী-সহ শুভাকাক্ষীরা।
সুদীপের মা নীলিমাদেবী বলেন, "অভাবের সংসারে পড়াশোনার এই বিপুল খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম হতে হয়েছে। তবুও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চাই ছেলের ইচ্ছে পূরণ হোক।" রাজ্য সরকার উচ্চ শিক্ষার জন্য পড়ুয়ায়াদের পাশে দাঁড়ায়। এমনকী তাঁদের আর্থিক সাহায্যও করে। তবে সুদীপের মতো গরিব ছাত্রের ভাগ্যে সেই সাহায্য এখনও জোটেনি।