আলু পেঁয়াজ জাতীয় খাদ্যপণ্যের আকাশ ছোঁয়া দাম নিয়ে সারা দেশের গৃহস্থরা জেরবার। সেই সময়েই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি প্রকল্প বহু মানুষকে, বিশেষ করে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার কম আয়ের মানুষদের কাছে মূল্যবৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করার ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুফল বাংলা প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ন্যায্য মূল্যের দোকান ও কাউন্টার খোলা হয়েছে। এখান থেকে কম দামে সব্জি কিনতে পারছেন মানুষ। সুফল বাংলার স্টলে ৫৯ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ ও ১৭ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। রাজ্য জুড়ে এরকম ১৪৪টি স্টল রয়েছে। কলকাতাতে রয়েছে ১১৬টি। এর মধ্যে স্থায়ী ও চলমান দু ধরনের দোকানই রয়েছে।
যতবারই সব্জি ও ফলের গগনচুম্বী দামের জন্য সংকট তৈরি হয়েছে, তখনই সুফল বাংলার স্টল সাধারণ মানুষের কাছে কার্যকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, "এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনা। আমরা বাংলার যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো যায় তার চেষ্টা করছি।"
এ প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল ২০১৪ সালে। শুরুতে ছিল ১৪টি চলমান দোকান। যেখানে কৃষকদের কাছ থেকে ফল ও সব্জি কিনে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হত। উৎপাদক ও উপভোক্তা দু তরফের সুবিধার জন্য সুফল বাংলা প্রকল্প। এতে সহযোগিতা করে থাকে দিল্লির ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের সফল, এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা।
বর্তমানে রাজ্যে ৪৭টি স্থায়ী দোকান ও ৯৭টি চলমান কাউন্টার রয়েছে। এগুলির সিংহভাগই কলকাতায়। শহরে মোট ২৪টি স্থায়ী দোকান ও ৯২টি চলমান দোকান রয়েছে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় এই কাউন্টারগুলি রয়েছে।
সুফল বাংলায় সরকারের টার্গেট গ্রুপ হল কৃষক ও গ্রাহক। কৃষিবিপণন ডিরেক্টরেটের আধিকারিকদের নিয়ে একটি প্রাইসিং কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এই কমিটি প্রতিদিন বাজার দর বিশ্লেষণ করে কত দামে কেনা হবে ও কত দামে বিক্রি হবে, তা ঘোষণা করে।
কীভাবে সুফল বাংলা মুদ্রাস্ফীতি আটকে দিল
খাদ্যদ্রব্যের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লেও, এর দুর্ভাগ্যজনক দিক হল শহরের দরিদ্র ক্রেতারা যে বেশি দাম দিয়ে খাদ্যপণ্য কিনছেন, তা গ্রামের কৃষকদের কাছে পৌঁছচ্ছে না। খাদ্য দ্রব্যের ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির আঁচ ক্রেতারা টের পেলেও তা প্রায়শই কৃষকদের বদলে পকেট ভারী করছে মধ্যস্বত্বভোগীদের। সুফল বাংলায় প্রকল্পে রাজ্য সরকার উপকারী মধ্যস্বত্বভোগীর ভূমিকা পালন করছে। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সবজি সংগ্রহ করছে তারা, দাম দিচ্ছে সাধরণত কৃষকরা যা পেয়ে থাকেন তার চেয়ে বেশি।
সুফল বাংলার ডিরেক্টর গৌতম মুখোপাধ্যায় বললেন, "২০১৪ সালে আলু ও পেঁয়াজের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের পুরো বাইরে চলে গিয়েছিল। রাজ্য সরকার সেই পণ্য ভরতুকি সহায়ক মূল্যে বিতরণ করে। কিন্তু সে সময়েই আমাদের মনে হয়েছিল মুদ্রাস্ফীতি আটকাতে একটা স্থায়ী সমাধান দরকার।"
সরকার তখনই বুঝতে পেরেছিল এ জন্য কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সব্জি কিনতে হবে, যার জন্য কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করা জরুরি।
গৌতমবাবুর কথায়, "আমরা একটা সংগঠিত ব্যবস্থার কথা ভেবেছিলাম। মধ্যস্বত্বভোগীদের আমরা শেষ করে দিতে চাইনি, কিন্তু কৃষক ও ক্রেতা দুপক্ষের মাঝে সরকারের উপস্থিতি রাখতে চাওয়া হয়েছিল।"
দাম ঘোষণা করার জন্য দ্রুত তৈরি হয়েছিল একটি ওয়েবসাইট। এর উদ্দেশ্য শুধু ক্রেতা ও বিক্রেতাকে দামের ব্যাপারে সচেতন করাই নয়, গোটা পদ্ধতির মধ্যে একটা স্বচ্ছতা আনা।
সব্জি সংগ্রহ করে গুদামজাত করার জন্য মূল হাব হিসেবে বাছা হয়েছিল সিঙ্গুরে। এখন এরকম ২০টি হাব রয়েছে। ৬০ হাজারেরও বেশি কৃষককে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রকল্পে নতুন কর্মসসংস্থানও হচ্ছে। যেমন দোকান চালানোর জন্য লোক দরকার। সবচেয়ে বড় কথা অপ্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানও হচ্ছে।
মার্চমাসের মধ্যে সুফল বাংলার আরও ৫৬টি কাউন্টার খোলা হবে। আগামী দু বছরের মধ্যে কাউন্টারের সংখ্যা ৫০০তে পৌঁছবে। পণ্যের সংখ্যাবৃদ্ধিরও পরিকল্পনা রয়েছে।