Sukanta Majumder-Rajiv Kumar: সুকান্ত মজুমদার-কাণ্ডে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পুলিশ সুপার, জেলাশাসক-সহ রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং রাজ্যের মুখ্যসচিবকেও তলব করল লোকসভার প্রিভিলেজ বা স্বাধিকার রক্ষা কমিটি।
এসপি অফিস অভিযান
গত মঙ্গলবার, অর্থাৎ ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বিজেপি সন্দেশখালি-কাণ্ডে বসিরহাটের এসপি অফিস ঘেরাও অভিযান চালিয়েছিল। নেতৃত্বে ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি ট্রেনে বসিরহাট গিয়ে বাইকে চেপে এসপি অফিসের পথে রওনা হয়েছিলেন। এই অভিযান ঘিরে পরিস্থিতি রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ। ঘটনার সময় বসিরহাটের এসপি অফিস সংলগ্ন ৫০০ মিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি ছিল। তার মধ্যেই ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে শুরু করেছিলেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা।
অভিযোগ, পালটা অভিযোগ
পালটা লাঠি উঁচিয়ে বিজেপি নেতা-কর্মীদের তাড়া করেছিল উপস্থিত বিশাল পুলিশবাহিনীও। এমনটাই দাবি বিজেপির। পুলিশের অভিযোগ, এই সময় বিজেপির নেতা-কর্মীরা তাঁদের লক্ষ্য করে ঢিল এবং ইট ছোড়ে। পুলিশকর্মীদের মারধর করে। তাতে একাধিক পুলিশকর্মী আহত হন। পালটা, রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ, পুলিশই বিক্ষোভকারী বিজেপি কর্মীদের লক্ষ্য করে ইট ছুড়েছে। বিজেপির মহিলা কর্মীদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করেছে।
ফের সন্দেশখালি যেতে বাধা
ওই ঘটনায় সুকান্ত মজুমদার ও বিজেপির উপস্থিত নেতা-কর্মীদের বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছিল। রাতে টাকির এক হোটেলে থেকে গিয়েছিলে রাজ্য বিজেপি সভাপতি। তাঁর হোটেলের বাইরে এত পুলিশ রাখা হয়েছিল যেন তিনি কার্যত বন্দি। পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি, বুধবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি সন্দেশখালি যাওয়ার চেষ্টা করেন। এই সময় তাঁকে বিশাল পুলিশবাহিনী বাধা দেয় বলে অভিযোগ। সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তারক্ষীরা ছিলেন। এই গন্ডগোলের মধ্যে সুকান্ত মজুমদারকে দেখা যায় গাড়ির বনেটে মঞ্চের মত উঠে পড়তে। এই সময় সুকান্ত মজুমদারকে কার্যত নীচে নামানো হয়। আচমকা দেখা যায়, তিনি মাটিতে শুয়ে পড়ছেন। তাঁকে মাটিতে শুইয়ে দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালে যাওয়া নিয়ে সমস্যা
এই সময় সুকান্ত মজুমদার সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। তাঁর চোখেমুখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, লাভ হয়নি। এরপর রাজ্য বিজেপি সভাপতিকে বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বিজেপি কর্মীরা। কিন্তু, পুলিশ অচৈতন্য সুকান্ত মজুমদারকে নিজেদের গাড়িতে তুলে নেয়। বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে যানজট তৈরি হলেও, পুলিশ সেই যানজট কাটানোর চেষ্টা করেনি। ফলে, অসুস্থ সুকান্ত মজুমদারের হাসাপাতালে পৌঁছতে দেরি হয়। বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে কিছুক্ষণ চিকিৎসার পরে রাজ্য বিজেপি সভাপতিকে নিয়ে আসা হয় বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে।
আরও পড়ুন- স্ত্রীর ছবি শেয়ার করে দ্বিতীয়বার বিয়ে ঘোষণা সাংসদ সৌমিত্রর, জানুন নববধূর পরিচয়
সুকান্তর অভিযোগ ও তলব
এইরকম প্রশাসনিক অসহযোগিতার অভিযোগে সুকান্ত মজুমদার বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লাকে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তারপরই নড়েচড়ে বসেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অনুরোধ জানান। এর পাশাপাশি লোকসভার স্বাধিকার রক্ষা কমিটি তলব করে রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকা, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক শরৎকুমার দ্বিবেদী, বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার হোসেন মেহেদি রহমান, অতিরিক্ত সুপার পার্থ ঘোষকে। শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাঁদের দিল্লি যাওয়া নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁদের লোকসভার কমিটির কাছে হাজিরা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।