Advertisment

হাঁসফাঁস গরমে নাজেহাল অবস্থা, নিজে এবং নিজের সন্তানকে সুস্থ রাখতে মেনে চলুন কতগুলি টিপস

তীব্র তাপপ্রবাহে নাকাল আম আদমি। সুস্থ থাকতে মেনে চলুন কতগুলি টিপস

author-image
Sayan Sarkar
New Update
NULL

প্রতীকী ছবি

বৈশাখকে বলা হয় মধু মাস। চারিদিকেই রসালো ফলের ছড়াছড়ি। কিন্তু এবার বৈশাখ যেন শুধুই জ্বালা ধরাচ্ছে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা দক্ষিণবঙ্গ বাসীর। বহু জেলায় তাপমাত্রা ৪০ পার, তাপপ্রবাহ, গরমে নাকাল কলকাতাও। পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, মালদাতে তীব্র তাপপ্রবাহে নাকাল আম আদমি। রবিবার সকাল থেকেই হাঁসফাঁস অবস্থা কলকাতারও।

Advertisment

প্রচণ্ড গরমে সবথেকে বেশি চিন্তা পাঁচ বছরের নীচে শিশুদের এবং ৬৫ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের নিয়ে। তাঁদের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। কী রয়েছে সেই সতর্ক বার্তায়? বলা হয়েছে চড়া রোদ্দুরে না বেরনোই ভাল। অবশ্য সকলেরই সকাল ১১ টার পরে সরাসরি রোদ্দুরে যাওয়া ঠিক নয়। ছাতা ব্যবহারের সঙ্গে পর্যাপ্ত জল ও শরবত পান করে বাইরে গেলে ভাল হয়। রোদ্দুর থেকে হঠাৎ ঠাণ্ডায় না যাওয়াই ভাল। এই সময় কিছু জীবাণুরা সক্রিয় হয়ে ওঠে।

পেটের সমস্যা, টাইফয়েড, ভাইরাল ফিভার, ঠান্ডা লেগে জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা হতে পারে। বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে যেমন ঠান্ডা লাগে, তেমনই ঘাম বসেও ঠাণ্ডা লাগতে পারে। তাই এই ব্যাপারটাও খেয়াল রাখতে হবে। সেই সঙ্গে খাবার দাবারের বিশেষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এব্যাপারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌম্যজিৎ গুহ জানিয়েছেন, “ডায়রিয়া, ডিহাইড্রেশন, জ্বর, ঠান্ডা, হিট স্ট্রোক এমন নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা এই সময় সবথেকে বেশি। তাই আমাদের কতগুলি নিয়ম মেনে চলতে হবে।

১. এই গরমে সুস্থ থাকতে হলে প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে। বাইরে বেরোলে ORS অথবা গ্লুকোজ সঙ্গে রাখা উচিত। দিনে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ লিটার জল খাওয়াটা এই গরমে খুবই দরকার।

২. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন প্রচুর রসালো ফল। রসালো ফল আপনার শরীরের জলের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করার পাশাপাশি বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল ও খনিজের অভাব দূর করবে।

৩. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে সবজি রাখুন এবং তরকারিতে ঝোল রাখুন। এসময় যতটা সম্ভব কষা রান্না, তেল, ঝা্ল মশলা এড়িয়ে চলায় ভাল। রাস্তায় ফাস্ট ফুড, কাটা ফল এড়িয়ে চলুন।

৪. অতিরিক্ত মাংস খাওয়া শরীরের জন্য এমনিতেই ক্ষতিকর। প্রতিদিন মাংস খেলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে নানা রোগ। আমাদের শরীরের বেশিরভাগ রোগের অন্যতম কারণ প্রতিদিন মাংস খাওয়া। তাই প্রচণ্ড গরমে সুস্থতা বজায় রাখতে কম পরিমাণে মাংস খান। সেই সঙ্গে অ্যালকোহল কম খাওয়া এই গরমে খুবই জরুরি।

৫. কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম পরিমাণে খান। সেই ঘাটতি পূরণ করুন সবজি, ফল দিয়ে।

৬. গরমে নিয়মিত পান করুন লেবুর শরবত কিংবা বেলের শরবত। সম্ভব হলে ডাবের জল পান করুন।

৭. বাড়ির বাইরে বেরোলে ছাতা ব্যবহার করতে ভুলবেন না।

৮. প্রতিদিন সকালে হালকা ব্যায়াম করুন। খুব বেশি ব্যায়াম এই গরমে এড়িয়ে চলুন।

৯. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আরামদায়ক জামাকাপড় পরা। এই গরমে সুতি পোশাক এবং পোশাকটি ঢিলেঢালা পোশাক পরার চেষ্টা করুন, কেননা আঁটসাঁট পোশাকে গরম বেশি অনুভূত হয়।সেই সঙ্গে ঘাম বসার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

১০. সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই গরমে রোগ থেকে এসেই ঠান্ডা জল খাবেন না। অথবা স্নান করবেন না। বাইরে থেকে এসে বিশ্রাম নিয়ে জল খান এবং বেশ কিছু সময় পরে স্নান করুন।

গরমে বাচ্চাদের নিয়েও বাবা, মার চিন্তা কম নয়, স্কুল, টিউশন, খেলাধুলা সব কিছুর মাঝেও স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরি। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম মানবেন সে ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল চৌধুরী।

১. শিশুকে সবসময় সঙ্গে জলের বোতল দিন-গরমে সকলেরই সারাদিন প্রচুর জল খাওয়া উচিৎ। বাচ্চারা খেলাধুলো করার কারণে ঘাম বেশি হয় ফলে ওদের জলের প্রয়োজনও হয় বেশি।

২. জল খাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে আপনার সন্তান যেন পরিস্রুত পানীয় জল পান করে কারণ গরমে পেটের রোগের সম্ভাবনা বেশি। 

৩. বাচ্চাদের টাটকা ফলের রস, ডাবের জল, বাটার মিল্ক বা লেবুর রস রিফ্রেশমেন্ট হিসেবে খেতে দিন। এতে শরীরে জলের সাম্য বজায় থেকে শিশুদের ক্লান্তি দূর হবে।

৪. গরমে বাচ্চাকে সবসময় হালকা রঙের জামাকাপড় পরানোর চেষ্টা করুন। হালকা রঙ গরম তাড়াতাড়ি শুষে নিয়ে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

৫. গরমে অতিরিক্ত সময় বাচ্চাকে এসিতে রাখবেন না। এতে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেই সঙ্গে ঠান্ডা পানীয় খাবার সময়ে সতর্কতা মেনে চলা উচিৎ।

৬. বাচ্চাদের ত্বকে অনেক সময় গরমে র‍্যাশের সমস্যা দেখা দেয়। তাই গরমে রোদে বেরোনোর আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না।

৭. দুপুর ১২ টা থেকে ৪ টে পর্যন্ত রোদে যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলুন, আপনিও এবং আপনার সন্তানকেও ওই সময়ে রোদের মধ্যে বের করবেন না।

৮. গরমে বাচাদের ফাস্ট ফুড থেকে দূরে রাখুন। গরম কালে পোকামাকড়ের কামড়, লালা থেকে অনেক সময় ইনফেকশন হয়। তাই বাচ্চাকে বাইরে পাঠানোর সময়, বিশেষ করে সন্ধেবেলা ইনসেক্ট রিপেল্যান্ট লাগিয়ে পাঠান। রাত্রে মশারি ব্যবহার করুন না করলে অবশ্যই মসকিটো রিপেল্যান্ট বাচ্চাকে লাগিয়ে দিন।

Advertisment