nutritious foods: পুষ্টিকর খাবারে বাজিমাত বাংলার। সেরার সেরার শিরোপা ঝুলিতে পুরেছে এই বাঙালি পদটি। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের আটপৌরে এক গৃহবধূ এক কথায় এ যেন নতুন এক ইতিাস রচনা করে ফেলেছেন। দেশের সেরা পুষ্টিকর খাবারের দৌড়ে প্রথম পাঁচের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে গাঁয়ের বধূর হাতে তৈরি ‘কাঁকড়া-ডাল।’
একটি সর্বভারতীয় সংস্থার উদ্যোগে বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশব্যাপী পুষ্টিকর খাবারের (nutritious foods) প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সেই প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৈপিঠের পূর্ব গুড়গুড়িয়ার বাসিন্দা গঙ্গারানি হালদারের (Gangarani Haldar) তৈরি কাঁকড়া-ডালের রেসিপি পাঠানো হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৮০০ রেসিপির মধ্যে থেকে গঙ্গারানির সেই রান্না জায়গা করে নিয়েছে সেরা পাঁচে। আগামী সপ্তাহে মুম্বই যাবেন গঙ্গারানি। ২৭ এপ্রিল সেখানে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় বিচারকদের সামনে নিজেই রাঁধবেন কাঁকড়া-ডাল।
শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামী, দুই ছেলেকে নিয়ে গঙ্গারানির সংসার। স্বামী চাষবাদের কাজ করেন। বছর পঁয়তাল্লিশের গঙ্গারানি মূলত ঘর সামলান। সংসারের কাজেই রান্নাঘরে কাটে তাঁর অনেকটা সময়। চিরাচরিত নানা পদের সঙ্গে নিজের ভাবনা মিশিয়ে প্রায়ই তিনি বানিয়ে ফেলেন নিত্যনতুন সব খাবারের পদ। সুন্দরবন (Sundarbans) ঘেঁষা এই সব এলাকায় কাঁকড়া (Crab) খুবই সহজলভ্য।
কাঁকড়ার নানা চেনা পদ বাড়িতে প্রায়ই বানাতেন গঙ্গারানি। এক দিন সেই কাঁকড়ার সঙ্গে ডালের মিশেলে তৈরি করে ফেলেন কাঁকড়া-ডাল। পরিবারের লোকের পাশাপাশি বাড়িতে আসা অতিথিদের প্রায়ই খাওয়াতেন তাঁর তৈরি এই পদ। এভাবেই এক দিন তাঁর বাড়িতে আসা এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েক জন সদস্য কাঁকড়া-ডালের স্বাদ পান। তাঁরাই পুষ্টিকর খাবারের সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় পাঠিয়ে দেন গঙ্গারানির ওই রেসিপি।
আরও পড়ুন- UPSC-তে দুর্দান্ত সাফল্য বাঙলার মেয়ের! শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে রাজ্যের আরও দুই কৃতী
জয়নগরের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে অমিতাভ রায় বলেন, “সুন্দরবন ঘেঁষা এই সব এলাকায় কৃষক-মৎস্যজীবীদের নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই কাজ করছে আমাদের সংগঠন। সেই সূত্রেই ওই চাষি পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিচয়। কাজের ফাঁকেই এক দিন গঙ্গারানির বাড়িতে খেতে গিয়ে তাঁর তৈরি কাঁকড়া-ডাল খেয়ে চমকে যাই। কাঁকড়ার পদ সাধারণত মশলাদার হয়। কিন্তু এটা খুবই সাধারণ ও পুষ্টিকর একটা খাবার। সেই সঙ্গে স্বাদও দুর্দান্ত। তখনই ঠিক করি, কাঁকড়া ডালের রেসিপি আমরা ওই প্রতিযেগিতায় পাঠাব। আজ গোটা দেশের সেরা পাঁচ রেসিপিতে জায়গা করে নিয়েছে গঙ্গারানির কাঁকড়া-ডাল। আশা করছি, সুন্দরবনের এই খাবার দেশের সেরা হবে।”
গঙ্গারানির কথায়, “দু’ধরনের ডাল আর কাঁকড়া দিয়ে এই পদ তৈরি হয়। খুব বেশি মশলা লাগে না। হালকা খাবার হিসেবেই খাওয়া যায়। বাড়িতেই খাওয়ার জন্য বানাতাম। কেউ এলেও বানিয়ে দিতাম। ভাবিনি, কোনওদিন মুম্বইয়ে (Mumbai) গিয়ে বানাতে হবে। খুবই ভাল লাগছে।” স্ত্রীর এই সাফল্যে খুশি গঙ্গারানির স্বামী অশোক হালদারও। তিনি বলেন, “ঘরের সামান্য একটা রান্না এত বড় মঞ্চে স্বীকৃতি পাবে ভাবিনি। ওই সংগঠনকে ধন্যবাদ জানাই।”