তিনি সুন্দরবনের 'সুজন'। চাকরি ছেড়ে বছর কুড়ি ধরে নিঃস্বার্থ ভাবে সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা প্রদান করে চলেছেন তিনি। শনিবার যখন পদ্মশ্রী পুরস্কারের তালিকায় নাম ঘোষণা হল, তখনও তিনি ‘সুজন চিকিত্সা কেন্দ্র’-এ বসেই একের পর এক রোগী দেখে চলেছেন। তিনি ডাক্তার অরুণোদয় মণ্ডল। উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাটের হিঙ্গলগঞ্জের চারাল খালিতে জন্ম। দু'হাজার সালের বন্যায় নদীর বাঁধ ভেঙ্গে গ্রামে জল ঢুকে অসহায় সুন্দরবনের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সে দিন থেকেই।
প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক সন্ধ্যায় শনিবার পদ্মশ্রী পুরস্কারের তালিকা ঘোষণা করল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সেই তালিকায় উজ্জ্বল হয়ে রইলেন বাংলার চিকিৎসক অরুণোদয় মণ্ডল। পদ্মশ্রী পুরস্কারের প্রচলন থেকে এ যাবৎকাল বহু চিকিৎসকই এই পুরস্কার পেয়েছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অপরিসীম অবদানের জন্য বাংলার বহু চিকিৎসকদের হাতে উঠেছে এই পুরস্কার। কিন্তু অরুণোদয় মণ্ডল যেন অনন্য! পদ্মশ্রী পুরস্কারে নাম ঘোষণা পর রবিবারও সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার প্রিয় মানুষদের কাছে যেতে ভোলেননি অরুণোদয়বাবু। রবিবারে 'অরুণোদয়ে' খুশির বাঁধ ভাঙল সুন্দরবনে।
প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক সন্ধ্যায় পদ্মশ্রী পুরস্কারের তালিকায় উজ্জ্বল হয়ে রইলেন বাংলার চিকিৎসক অরুণোদয় মণ্ডল। কী বললেন তিনি? pic.twitter.com/oYd2ZRRJ9H
— Indian Express Bangla (@ieBangla) January 26, 2020
কুড়ি বছর ধরে এটাই তাঁর রুটিন। প্রতি শনি ও রবিবার নিঃস্বার্থ ভাবে সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছেন ডা: অরুণোদয় মণ্ডল এবং তাঁর সহকর্মীরা। প্রতি সপ্তাহের শনিবার কলকাতা থেকে ছ’ঘণ্টার পথ পেরিয়ে অরুণোদয়বাবু চলে আসেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায়। সারা সপ্তাহ তাঁর অপেক্ষাতেই থাকেন শ'য়ে শ'য়ে রোগী। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন। শনিবার সেখানেই রাত কাটিয়ে রবিবার সকাল থেকে ফের রোগী দেখা শুরু করেন তিনি। ১৯৭৯ সালে কলকাতার ডাক্তর বি সি রায় শিশু হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। এক বছর সেখানে চাকরি করার পর ১৯৮০ সালে চাকরি ছেড়ে বিরাটিতে নিজে চেম্বার শুরু করেন।
আরও পড়ুন: অবসরের এক যুগ পরেও বিনা বেতনে স্কুলে পড়িয়ে চলেছেন দৃষ্টিহীন শিক্ষক
জন্মসূত্র হিঙ্গলগঞ্জ। তাই জন্মভূমি সংলগ্ন এলাকায় বেশ কিছু মানুষের পরিচয় ছিল আগেই থেকেই। সেই পরিচিতি থেকেই সুন্দরবনের সাহেবখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের দাসপাড়ায় ‘সুজন চিকিত্সা কেন্দ্র’ নামে একটি চেম্বারও তৈরি করেন অরুণোদয়বাবু। সেখান থেকেই ওই এলাকার মানুষদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করে আসছেন। প্রয়োজনে বিনা পয়সায় ওষুধ দেন তিনি। পদ্মশ্রী পুরস্কারের সুখবরটা পেয়ে তা তিনি শয্যাশায়ী স্ত্রীকেই উৎসর্গ করেছেন। 'পদ্মশ্রী' অরুণোদয় মণ্ডল বলেন, ‘আমার স্ত্রী প্রতিদিনই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। তারপরেও মানুষের পাশে থাকার জন্য আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে চলেন। তবে এই পুরস্কারের ভাগীদার আমি একা নই, এ পুরস্কার সুন্দরবনবাসীরও"।