জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় ‘তাক লাগানো সাফল্য’! স্কুলের বয়স হয়নি এখনও, তার আগেই ‘ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ড’সে নাম তুলে ফেলল রিষড়ার প্রভাসনগরের বছর আড়াইয়ের কাব্য। স্রেফ মোবাইল দেখে দেখেই কাব্য যে এত কিছু নির্ভুল ভাবে শিখে ফেলেছে, তা দেখে হতবাক তার মা-বাবাও। গড়গড় করে ছড়া বলছে, সেই সঙ্গে হাতে পেনসিল নিয়ে দিব্যি এঁকে ফেলছে ছবিও। ইংরাজি বর্ণমালা একেবারে মুখস্থ।
কিছু দিন আগে মা যোগাযোগ করেছিলেন ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের সঙ্গে। তার পরই মেলে ‘সেরার সেরা স্বীকৃতি’। দেশের যে কোন রাজ্যের রাজধানী হোক অথবা জাতীয় পশু-পাখি থেকে ‘মেডিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টস’ সব কিছুই মুহূর্তে বলে দিতে পারে বছর আড়াইয়ের কাব্যা। বাবা সেনাকর্মী মেয়েকে সেভাবে সময় দিতে পারেন না। মা একা হতেই সংসার সামলান। তার মাঝেই মেয়ের এমন প্রতিভায় রীতিমত চমকে উঠেছেন তিনি নিজেও।
এতটুকু বয়সে মেয়ের এমন কৃতিত্বে হতবাক পরিবারের অন্য সকলেই। 'সুপার কিড' কাব্য’র ইংরাজি বর্ণমালা থেকে শুরু করে পশুপাখির নাম, ছড়া, রাজ্য, দেশের নাম, দেশের একাধিক রাজ্যের রাজধানীর নামও একেবারে ঠোঁটের ডগায়। বাবা ধীরজ কুমার পেশায় সেনাকর্মী। রাজৌরিতে দীর্ঘদিন পোস্টিং ছিলেন। মা’ দীপিকা কুমারের সঙ্গেই সারাদিনের খুনসুটি। হুগলির এই ‘বিস্ময় শিশুকন্যা’কে ঘিরে এখন রীতিমত শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা এলাকা জুড়ে।
দীপিকা দেবী বলেন, ‘মাত্র এক বছর বয়স থেকেই ওর স্মৃতিশক্তি আমাদের সবাইকে অবাক করেছে। ওর যখন ২ বছর বয়স তখনই মোবাইল হাতে রপ্ত করে ফেলেছে রাজ্যের নাম, রাজধানীর নাম, ছড়া-কবিতা। বাড়িতে-বাইরে যা কিছুই দেখছে তাই নকল করার চেষ্টা করছে। বয়স কিছুটা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ও একবার শুনেই ফল, ফুল, পশু-পাখি, রাজ্য-রাজধানীর নাম মুখস্থ বলে দিতে পারে। সব থেকে বড় কথা, এই সব কিছু ও নিজের চেষ্টাতেই শিখেছে। স্রেফ মোবাইল হাতে নিয়েই ইউটিউব চ্যানেল দেখেই এই বয়সে এত কিছু একেবারে ঠোঁটের ডগায়। অনেকেই বলেন, বাচ্চাদের মোবাইল থেকে দূরে রাখতে, কিন্তু কাব্যর এই কৃতিত্ব মোবাইল দেখেই।'
আরও পড়ুন জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় ‘সেরার সেরা মুকুট’, খুদে গর্বিতার তাক লাগানো সাফল্যে গর্ব হবে
তিনি আরও বলেন, ‘এখনকার অনেক মা-বাবাই তাঁদের সন্তানদের ওপর অনেক কিছুই চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন, অনেক ক্ষেত্রে যা বাচ্চাদের স্বাভাবিক প্রতিভা ও বিকাশকে নানাভাবে ব্যাহত করতে পারে। বাচ্চাদের তাদের মত করে বড় হতে দিন, ওদের ইচ্ছা আগ্রহের দিকে বাড়তি নজর রাখুন, কারণ প্রতিটি বাচ্চা’ই কিছু কিছু প্রতিভা নিয়েই জন্মায় বাবা-মায়ের কাজ সেই প্রতিভা যাতে বিকশিত হয় সেই দিকটা নিশ্চিত করা।”
মা দীপিকার কথায়, “আমি চাই, আমার মেয়ে বড় হয়ে ওর নিজের পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করুক, স্বাভাবিক ছন্দেই বেড়ে উঠুক ও! তবে ওর ‘মেডিক্যাল ইন্সস্ট্রুমেন্টের’ প্রতি ঝোঁক দেখেই আমার ইচ্ছা ও বড় হয়ে ডাক্তার হোক। তবে সব কিছুর আগেই কাব্য মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠতে পারে এটা ঈশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনা’। কাব্যর এই সাফল্যে খুশি তার দাদু, দিদিমাও। তাঁদের কথায়, “ছোট থেকেই ওর মুখস্থ বিদ্যাটা তাক লাগানোর মতই, সেই স্বীকৃতিও ইতিমধ্যেই মিলেছে, তবে আগামী দিনে আরও বড় কিছু হোক, দেশের সমাজের মুখ উজ্জ্বল করুক আমাদের সকলের আদরের কাব্যা এটাই আমাদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা”।
মেয়ের প্রতিভা দেখেই অনলাইনে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মা দীপিকা দেবী। প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণ করতেই সাফল্যের স্বীকৃতি মেলে। প্রতিযোগিতায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাচ্চারা অংশ নিলেও সেরার সেরা মুকুট ছিনিয়ে নেয় ‘সুপার কিড’ কাব্য। এখন মা দীপিকার ইচ্ছা মেয়ে আরও বড় কিছু রেকর্ড জিতে আবারও পরিবারের নাম উজ্জ্বল করুক। মেয়ের সাফল্যে গর্বিত বাবা সেনাকর্মী ধীরজ কুমারও। দেশ রক্ষার কাজে ব্যস্ত থাকায় সেভাবে সময় দিতে পারেন না মেয়েকে, তবে আদরের একমাত্র মেয়ে কাব্যর এই কৃতিত্বে খুশি তিনিও।