হিন্দি আধিপত্যে ক্রমশ বাঙালি ও বাংলার অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে। প্রতিবাদে মুখর বাংলা পক্ষ। এর বিরুদ্ধে সংগঠনটির তরফে বুধবার কলকাতায় বিরাট মিছিল, সভা করা হয়। বাংলা পক্ষর প্রতিবাদকে সমর্থন করেছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কবি জয় গোস্বামী, শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের মত বাঙালি বিদ্বজ্জনেরা।
বাংলা পক্ষের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির পরীক্ষা, শিক্ষাদান, তথ্য আদান-প্রদান ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রে ইংরেজি সরিয়ে হিন্দি বাধ্যতামূলক করা, হিন্দি না জানার কারণে ভারতীয় নাগরিককে শাস্তি দেওয়া, অহিন্দি জাতির অর্থ ও সম্পদ লুঠ করে সেই টাকায় ভারতে এবং ভারতের বাইরে রাষ্ট্রপুঞ্জে হিন্দি চাপানোর মাধ্যমে বাঙালি এবং সকল অহিন্দি জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে স্থায়ীভাবে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের দাস বানানোর চক্রান্ত চলছে। বিগত বহু বছর ধরেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার বাংলা পক্ষ।
হিন্দি সাম্রাজ্য়বাদের বিরুদ্ধে ও ভারতের প্রতিটি বাঙালির মৌলিক অধিকার রক্ষায় বাংলা পক্ষ কলকাতায় এ দিন বিরাট মিছিল ও পথসভা করে। বাংলা পক্ষপদাধিকারি ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন স্তরের বাঙালি রবীন্দ্র সদন থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত এই বিরাট মিছিল ও পথসভায় যোগ দিয়েছিলেন। হিন্দি সাম্রাজ্যবাদকে ধিক্কার জানাতে প্ল্যাকার্ড যেমন ছিল, তেমনই ছিল বাঙালি জাতির অভিভাবক চিত্তরঞ্জন দাশ, বাংলার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র, তামিল সহ সকল অহিন্দি জাতির নায়ক তথা তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আন্নাদুরাই, মহান কন্নড় জাতীয়তাবাদী কবি কুভেম্পুর অমর উক্তি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন। আগামী ১৬ই অক্টোবর বাংলা পক্ষ বাংলার প্রতিটি জেলায় এই বিক্ষোভ কর্মসূচি করবে।
বাংলা পক্ষর সাধারণ সম্পাদক গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'দিল্লি যদি ভেবে থাকে যে বাঙালি হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে দেবে, আত্মসমর্পণ করবে তাহলে তারা ভুল ভাবছে। আমরা সমস্ত ভাষার সমান অধিকার চাই। বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী শহিদরা নিজেদের পরবর্তী প্রজন্মকে হিন্দির দাস বানানোর জন্য ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ দেননি। বাংলার পবিত্র মাটি থেকে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের সমস্ত চিহ্ন মুছে দেবে বাঙালি। সকল শিরদাঁড়া সোজা অহিন্দি মানুষ এই লড়াইয়ে বাংলা পক্ষর সঙ্গে আছে। হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ ভারতের ঐক্য ধ্বংস করতে চায়। আমরা যে কোন মূল্যে ভারতের ঐক্য রক্ষা করব। বিজেপি এবং দিল্লি যেন আগুন নিয়ে খেলা না করে।'
সংগঠনের দাবি, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কবি জয় গোস্বামী, শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের মত বাঙালি বিদ্বজ্জনেরা বাংলা পক্ষর এই প্রতিবাদ কর্মসূচিকে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন। জয় গোস্বামীর বার্তা, 'আমি শারীরিক অসুস্থতার জন্য এই মিছিলে উপস্থিত থাকতে না পারলেও আমি এই প্রতিবাদকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি।" পবিত্র সরকার জানিয়েছেন, 'এইভাবে হিন্দির একাধিপত্য কায়েমের চেষ্টা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরোধী।'