বয়স যে কেবল মাত্র একটি সংখ্যা, তার আবারও এক প্রমাণ মিলল। সকাল হতে না হতেই সল্টলেক অঞ্চলে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেন বছর ৬৫- এর সুশীলা দাস। বৃদ্ধার জীবন সংগ্রামের কাহিনীকে কুর্নিশ জানিয়েছে আট থেকে আশি সকলেই। পেটের তাগিদে সমাজে ভিন্ন-ভিন্ন পেশাকে বেছে নেন মানুষজন। তবে ৬৫ বছর বয়সেও যে ভারী ড্রামে করে জল লোকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন এক বৃদ্ধা এমন কাহিনী সাধারণত খুব একটা চোখে পড়ে না। ৪২ বছর ধরে সল্টলেকবাসীর তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন এই বৃদ্ধা।
Advertisment
কঠিন জীবন সংগ্রামে ব্রতী হয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ বছর একই ভাবে টলি করে টেনে লোকের বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেন সুশীলা দেবী। সারা মাস খেটে রোজকার বলতে মেরে কেটে ১০ হাজার। কোভিড কালের ভয়াবহতা কেড়ে নিয়েছে জীবনের ছন্দ। হারিয়েছেন নিজের বড় ছেলেকে। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই তাও জারি রয়েছে। হার না মানা লড়াইকে সম্বল করে আজ ও সকাল হতে না হতেই বিরল এই পেশাকে নিয়েই এগিয়ে চলছেন তিনি।
বৃদ্ধার কথায়, "আগে মাসিক রোজকার ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যেতে। লকডাউন-কোভিড জীবনের চেনা পথকে অচেনা করে তুলেছে। বড় ছেলের মৃত্যুর পর একাই জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে চলেছি"। ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে বাধ্য হয়ে বেচে দিতে হয়েছে অটো। ছেলের মৃত্যু শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই মাত্র সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই রেলে কাটা পড়ে মৃত্যু হয় মেয়ের। বৃদ্ধা জানান, “এই বয়সে যেখানে মানুষজন একটু বিশ্রাম খোঁজেন, সেখানে সকাল হতে না হতেই জল টেনে টেনে লোকের বাড়ি বাড়ি সাপ্লাই করেন তিনি। দেড় গাড়ি জল সাপ্লাই দিয়ে মেরে কেটে জোটে হাজার পাঁচেক”।
সারা মাস এভাবে খেঁটে বড় জোর হাজার দশেক টাকা উপার্জন করেন তিনি। সামান্য উপার্জনেই ব্যাঙ্ক লোন পরিশোধ করা থেকে সংসার চালানো সব কিছুই করতে হয় তাঁকেই। বৃদ্ধার এই লড়াইয়ের কাহিনী রীতিমত তোলপাড় ফেলেছে। তাঁর জীবন সংগ্রামকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলেই।