প্রায় সপ্তাহ দুয়েক নিখোঁজ থাকার পরে নদীর ধার থেকে মিলল রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বছর বত্রিশের মীনাক্ষী বিশ্বাসের দেহ। প্রথমিকভাবে বেওয়ারিশ মনে করা দেহের শনাক্তকরণ হতেই এলাকা জুড়ে ছড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্য। ঘটনায় মীনাক্ষী দেবীর স্বামী রাজু সরকারের নাম জড়ানোর ২৪ ঘন্টার মধ্যে সোমবার জামিন অযোগ্য ধারায় খুনের অভিযোগে রঘুনাথগঞ্জে নিজের বাড়ী থেকেই তিনি গ্রেফতার হন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই দম্পতির একটি বছর দেড়েকের কন্যা সন্তানও রয়েছে। ধৃতের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ এ (বধূ নির্যাতন), ৩০৪ বি (পণের দাবীতে খুন), ৩০২ (খুন),৩৪ (একই অপরাধের উদ্দেশ্যে একাধিকের সম্মিলিত পরিকল্পনা) ও ২০১ (প্রমাণ লোপাট) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
রাজুকে এদিন জঙ্গিপুর অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজত চেয়ে আদালতে তোলা হয়। এই ব্যাপারে থানা চত্বরে দাঁড়িয়েই মৃতার বাবা, অভিযোগকারী ঈশ্বরচন্দ্র বিশ্বাস, বলেন, "আমার সুশ্রী,উচ্চশিক্ষিত মেয়েকে চক্রান্ত করে খুন করা হয়েছে। এর পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে। মূল অভিযুক্ত আমার জামাই রাজু ছাড়াও ওর সৎমা, বোন, ভাই যুক্ত রয়েছে। সেইসঙ্গে আমার মেয়ের এক ডিভোর্সী মাসি প্রীতি মজুমদার, যে ওদের বাড়ীর পাশেই থাকত, তার সঙ্গে রাজুর অবৈধ সম্পর্ক ছিল। ফলে তারও ইন্ধন থাকতে পারে আমার মেয়ের এই জঘন্য খুনের ঘটনায়। আমি সকল দোষীর উপযুক্ত শাস্তি চাই।"
আরও পড়ুন: সীমান্ত জেলা মুর্শিদাবাদে বেআইনি মাদকের হদিশে ড্রোনের সাহায্য
স্থানীয় এবং পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মীনাক্ষী দেবীর বাবার বাড়ী নদীয়ার আনন্দ পল্লী এলাকায়। সেখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা। পরে কল্যাণীর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন তিনি। ২০১৩ সালের ১৫ মার্চ রঘুনাথগঞ্জের বাহাদী নগরের রাজু সরকারের সঙ্গে তার ভালবেসে বিয়েও হয়। কোনরকমে প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরানো রাজু শুরুতে টোটো চালিয়েই দিন গুজরান করতেন। পরে ব্যাঙ্ক কর্মী মীনাক্ষী দেবীর সঙ্গে বিয়ের সুবাদে তাঁরও আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। এমনকি স্ত্রীর কাছ থেকে জোর করে টাকা হাতিয়ে নানা ধরণের ব্যবসাও শুরু করেন তিনি, বলে অভিযোগ। সম্প্রতি টোটোর শোরুম খুলেও বসেন তিনি। এই নিয়ে উভয়ের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে মন কষাকষিও লেগে থাকত।
বর্তমানে মীনাক্ষী দেবী তার কাজের জায়গাতেও অসম্ভব চাপে ছিলেন বলে তাঁর সহকর্মীরা জানান। একজন সহকর্মী বলেন, "এখনই আমরা বিশেষ কিছু বলতে পারব না, তবে যতটুকু ওঁকে দেখেছি, মীনাক্ষী দেবী ইদানিং ডিসটার্বড হয়ে থাকতেন, কারোর সঙ্গে খুব একটা কথা বলতেন না। আমরাও চাই ওঁর মত দক্ষ একজন ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটিত হোক। দোষী সর্বসমক্ষে আসুক।"
গত ১২ নভেম্বর শেষবারের মতন রঘুনাথগঞ্জ থেকে লালগোলার উদ্দশ্যে রওনা দেন মীনাক্ষী দেবী। তার পর থেকেই তাঁর আর কোন হদিশ মেলেনি। যদিও তিনি নিখোঁজ হওয়ার পরের দিনই তাঁর স্বামী স্থানীয় থানায় একটি মিসিং ডায়েরি করেন। এদিকে ১৩ নভেম্বর নদিয়ার নাকাশিপাড়ার ঝাওতলা এলাকায় ভাগীরথী নদীর ধার থেকে উদ্ধার হয় এক মহিলার দেহ। দীর্ঘ ১২ দিন বেওয়ারিশ হিসেবে পড়ে থাকার পর ওই দেহটি মীনাক্ষী দেবীর বলে শনাক্ত করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তার পর থেকেই নয়া মোড় নেয় এই মৃত্যূ রহস্য। এদিন কোর্টে তোলার সময় রাজুকে এই ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোনও উত্তর না দিয়েই এড়িয়ে যান সংবাদ মাধ্যমকে।