স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির আঁচ এবার বিধানসভায়। শূন্য পদে 'অযোগ্য'দের নিয়োগে বেনামি আবেদনের প্রেক্ষিতে পুরো ক্যাবিনেটকেই জেলে পাঠাতে হবে। গ্রেফতার করতে হবে মুখ্যমন্ত্রী সহ মন্ত্রিসভার সব মন্ত্রিকে। সোমবার বিধানসভায় এই দাবিতে মুলতুবি প্রস্তাব আনেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অদিকারী, বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা ও বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, মিহির গোস্বামী, বঙ্কিম ঘোষরা। পত্রপাঠ যা খারিজ করে দেন স্পিকার। প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়করা।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই ক্যাবিনেট অযোগ্যদের চাকরির সুপারিশ করে কলকাতা হাইকোর্টে পাঠিয়েছিলেন। এখন ক্যাবিনেট দায়বদ্ধতা অ্যাসেম্বলিতে। কিন্তু অধ্যক্ষ মহোদয় তো বাম দিকে দেখতে পান না। বললেন ওটা বিচারাধীন বিষয় তাই আলোচনা হবে না। এটা বড় স্ক্যাম। ক্যাবিনেট মেধাকে বাদ দিয়ে অযোগ্যদের নিয়োগ করতে বলছে। আমরা এর প্রতিবাদে আলোচনা চেয়েছি। ক্যাবিনেট অ্যাসেম্বলিতে দায়বদ্ধ বলেও আলোচনার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। হাইকোর্ট চেপে ধরে জানতে চেয়েছে যে অযোগ্যদের নিয়োগের সুপারিশ কে করল? পরিস্কার সেটা মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ক্যাবিনেট করেছে। ফলে আমরা মুখ্যসচিব সহ পুরো ক্যাবিনেটের গ্রেফতার ও জেলযাত্রা চাই।'
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী সংবেদনশীল বলেই সকলকে চাকরিতে নেওয়ার কথা বলছেন। এখনও আদালত যাঁদের অযোগ্য বলা হচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও নির্দেশ দেয়নি। শুভেন্দুবাবুরা কি বলতে পারবেন তথাকথিত অযোগ্যদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হলে বিকারঞ্জন ভট্টাচার্যরা ওঁদের হয়ে মামলা লড়বেন না। আসলে উন্নয়নের ইস্যুতে এঁটে উঠে না পেরে বিজেপি এইভাবে টিঁকে থাকার চেষ্টা করছেন। ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে।'
আরও পড়ুনঃ পঞ্চায়েতে সাফল্য আসবে তৃণমূলের? আদালতে ঢোকার আগে সাফ উত্তর পার্থের
কার নির্দেশে ‘অযোগ্য’দের চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন করা হয়েছে আদালতে, সেই প্রশ্ন তুলে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ বহাল রেখেছিল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। এরপরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তিন সপ্তাহের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও হিমা কোহলির ডিভিশন বেঞ্চ। এখনই ওই বিষয়ে তদন্ত করবে না সিবিআই। একইভাবে শিক্ষাসচিব মণীশ জৈনের হাজিরার নির্দেশ সংক্রান্ত বিষয়েও স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত।
এদিকে কলকাতা হাইকোর্টে শুক্রবারই শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন দাবি করেছেন, অযোগ্যদের জন্য নতুন পদ তৈরির নির্দেশ উপযুক্ত স্তর থেকে এসেছিল। মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নির্দেশ এসেছিল। তিনি আইনি পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছিলেন। আমরা আইনজীবী এবং অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। আইন দফরের সঙ্গেও কথা হয়েছিল। স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও কথা হয়। মুখ্যসচিবকেও বিষয়টি জানানো হয়। এরপর ক্যাবিনেটে নোট পাঠানো হয়।
এবিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, ‘ক্যাবিনেট সিদ্ধান্তর পর অবশ্যই আমি সচিবকে আইনি পরামর্শ নিতে বলেছিলাম। তবে মাননীয় বিচারপতি কী জানতে চেয়েছেন বা তাঁর কাছে শিক্ষাসচিব কী জানিয়েছেন, সব আদালতে হয়েছে। আইনি বিষয়। আইনি ব্যাখ্যা থাকে। আমার এ নিয়ে এখন কিছু বলার নেই। কিছু বলার হলে নিশ্চয় উপযুক্ত জায়গা থেকে বলা হবে।’