খোদ গার্ডেন রিচ এলাকায় এ ধরনের ৮০০-এর বেশি অবৈধ নির্মাণ রয়েছে। বহুতল দুর্ঘটার পরই রাজ্যসরকারকে নিশানা করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারি। পাশাপাশি তিনি এও দাবি করেছেন এই এলাকা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের খাসতালুক। কীভাবে পুরসভার নজর এড়িয়ে বিশেষ করে মেয়রের নজর এড়িয়ে একের পর এক বেআইনি নির্মাণ হয়ে চলেছে সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। একই সঙ্গে বিরোধী দলনেতার অভিযোগ ক্ষমতা দখলের পর ৫হাজারের বেশি জলাশয় ভরাট করেছে শাসকদলের নেতারা।
দুর্ঘটনার পরই শুভেন্দু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন পাশাপাশি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। সেই সঙ্গে শুভেন্দু আরও লিখেছেন, 'এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে, মেয়রের অজান্তেই তার নাকের ডগায় একের পর এক অবৈধ নির্মাণ হচ্ছে'? স্থানীয় কাউন্সিলর শামস ইকবালকে গ্রেফতারের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। একজন কাউন্সিলর হয়ে কীভাবে বিলাসবহুল জীবন যাপন? সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন : < Mamata Banerjee: মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়েই গার্ডেনরিচে দুর্ঘটনাস্থলে মুখ্যমন্ত্রী, ‘নির্মাণ বেআইনি’ স্বীকার করলেন মমতা >
ইতিমধ্যেই লোকভা নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা করেছে কমিশন। জারি হয়েছে আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি। তারপরেও কীভাবে দুর্ঘটনার পর রাজ্যের শাসকদলের মুখ্যমন্ত্রী-মেয়র প্রকাশ্যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করছেন সেই প্রশ্ন তুলে শুভেন্দু বলেছেন, 'ক্ষতিপূরণের ঘোষণা শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তারাই করতে পারেন। রাজনৈতিক নেতারা নয়'। শুভেন্দু এদিন মৃতের পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা আহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার ক্ষতিপূরণের দাবিও জানান ।
গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেড়ে পড়ার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২ জনের। আহত প্রায় ১৫। এখনও চলছে উদ্ধারকাজ। জানা গিয়েছে ধ্বংস্তুপের ভিতর এখনও আটকে রয়েছেন ৬ জন। এদিন সকালেই ঘটনাস্থলে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ছিলেন পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তারা। এদিন ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেন তিনি। কথা বলছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বেআইনি নির্মানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘বহুতল নির্মাণের আগে আশেপাশের মানুষ জনের কথা ভাবা উচিৎ ছিল’। একই সঙ্গে তিনি কার্যত মেনেও নিয়েছেন “বেআইনি নির্মাণের জেরেই ঘটে গিয়েছে এত বড় দুর্ঘটনা”। এরপরই আহতদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী।
হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিল মেয়র ফিরাদ হাকিম বলেন, “উদ্ধার কাজ এখনও চলছে। ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।” এর পর অবৈধ নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা। তখন তিনি বলেন, “এটা পরে দেখব। আগে উদ্ধার কাজটা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হোক।”
অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, “এই বাড়ি প্ল্যান থাকতে পারে না। যাঁরা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আহতদের সকলেই পাশে টালির বাড়িতে থাকতেন। এক জনের ভুলে, অন্য জন শাস্তি পাচ্ছে। এত বড় বাড়ি এত সরু গলিতে কোনভাবেই হয় না"।
গার্ডেনরিচে নির্মিয়মান বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘বাংলায় বেআইনি বিল্ডিং ডেভেলপমেন্ট এখন একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাউন্সিলর, এমএলএ ,এমপিরা টাকা খাচ্ছে। লোকাল নেতারা টাকা খাচ্ছে। রাজ্যে নির্মীয়মান ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ে এখন নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে পড়ছে। এই যে দুর্নীতি হচ্ছে যেখানে অর্ধেক টাকা দিয়ে দিতে হচ্ছে লোকাল নেতাদেরকে, কাউন্সিলরদেরকে। কোন মতে ইট বালি দিয়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রকাণ্ড বহুতল। সেই জন্য সরকারকে সতর্ক হতে হবে। বিষয়গুলি নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার”।