রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ফোঁস করেছেন রাজ্যপাল। বৃহস্পতিবার সকালেই 'শেষ দেখে ছাড়ব' বলে হুঙ্কার ছেড়েছেন সিভি আনন্দ বোস। ধর্না ইস্যুতে সাদরে গ্রহণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ। এরপরই এদিন বিকেলে 'বাংলা দিবস' প্রসঙ্গে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজভবনে গিয়ে দেখা করেন বিরোধী দলনেতা সহ ৬০য়ের অধিক বিজেপি বিধায়ক। রাজভবন থেকে বেরিয়ে রাজ্যপালের প্রশসা করেন শুভেন্দু অধিকারী।
কী খুশি শুভেন্দু?
'বাংলা দিবস' প্রস্তাব এদিন বিধানসভায় পাশ হয়েছে। পয়লা বৈশাখ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনে আগ্রহী মমতা সরকার। সঙ্গে রাজ্য সঙ্গীত বিবেচিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বাংলার মাটি বাংলার জল'। এতে ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে বলে সোচ্চার বিজেপি। গেরুয়া শিবির ২০ জুন 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' উদযাপনের পক্ষপাতী। এতে পশ্চিমবঙ্গ গঠনের অন্যতম শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে বলে মত বিরোধী দল বিজেপির। পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ওই দিন 'ধ্বংসাত্মক ও বিভেদকামী'। শুভেন্দু এদিন বিধানসভায় সাফ জানিয়েছেন, রাজ্যপালকে 'বাংলা দিবস' প্রস্তাবে সই না করার আর্জি জানাবেন তিনি। দিল্লিও ছাড়পত্র দেবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঙ্কার, 'রাজ্যপাল বিলে সই করুন বা না করুন তাতে তাঁদের কিছু যায় আসে না। পয়লা বৈশাখই পালিত হবে পশ্চিমবঙ্গ দিবস।'
রাজ্যপালকে প্রস্তাবিত বিলে সই না করার আবেদন নিয়ে এদিন বিকেলেই বিধানসভান থেকে হেঁটে রাজভবনে পৌঁছন বিজেপি বিধায়করা। এর বেশ কিছুক্ষণ পর রাজভবনের বাইরে এসে রাজ্যপালের প্রশংসা করেন বিরোধী দলনেতা। দাবি করেন, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস তাঁদের জানিয়েছেন যে এ দিন বিধানসভায় 'বাংলা দিবস' প্রস্তাবের উপর বিধানসভার অন্দরে আলোচনা সরাসরি টিভই-তে দেখেছেন তিনি। বিরোধী দলনেতা ও বিরোধী বিধায়কদের যুক্তির প্রশংসা করেছেন রাজ্যপাল। বলেন, 'উনি (রাজ্যপাল) যেভাবে কর্তৃব্য পালন করছেন তাতে আমরা খুশি।
রাজ্য দিবস নিয়ে বিধানসভায় পাস করা প্রস্তাব কোনওমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেন? এ বিষয়ে রাজ্যপালের দুটি ইঙ্গিতই যথেষ্ট বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কথায় বিজেপি বিধায়কদের এদিন আনন্দ বোস বলেছেন, 'প্রথমত রাষ্ট্রপতি ২০ জুন টুইটার থেকে বাংলার মানুষকে পশ্চিমবঙ্গ দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। অতএব এখন তার বিরোধিতা মানে মাননীয়া রাষ্ট্রপতিকে অবজ্ঞা করা। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রের তরফে সব গভর্নর হাউসে পাঠানো ক্যালেন্ডারে ২০ জুন-কে বাংলা দিবস বলে উল্লেখ করা হয়েছে।'
রাজ্যপালের এই দুঠি পয়েন্টেই রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস নিয়ে সব বিতর্কের ইতি বলে মনে করছেন বিরোধী দলনেতা সহ বিজেপি শিবির। রাজ্যপালের যুক্তিতে সন্তুষ্ট শুভেন্দু অধিকারী।
বিরোধী দলনেতার সাফ দাবি, 'এরপর মমতা ব্যানার্জী যদি বালি, কয়লা, গরু চুরির অর্থে আরও অনেক দিবসের মতো পয়লা বৈশাখ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করেন তাহলে আমাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু সরকারি কোষাগারের অর্থে ওই দিন পালন সম্ভব নয়। এবার আমরা শুধু শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করে বলব উই শ্যাল ওভারকাম।'
পঞ্চায়েতে হিংসা, উপাচার্য নিয়োগ সহ নানা বিষয়ে নবান্ন-রাজভবন সংঘাত তুঙ্গে। তাই অতীতে রাজ্যপাল হিসাবে সিভি আনন্দ বোসের ভূমিকা নিয়ে যে শুভেন্দু অধিকারী অসন্তুষ্ট ছিলেন, তিনিই এখন খুশিতে ডগমগ।
প্রসঙ্গ- সরকার উল্টোনো
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বিধানসভায় বিতর্কের মধ্যে বলেছেন, 'বিধানসভায় পাস হওয়া বিলে আপনারা সই না করলে সরকার উল্টোনোর পর আমরা অনুমোদন দিয়ে দেব।' রাজভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে পাল্টা শুভেন্দু বলবেছেন, 'একসঙ্গে লোকসভা বিধানসভা ভোট হলে ২০২৬ সালের আগেই মমতা সরকার উল্টে যাবে।'