সিঙ্গুর আন্দোলন ছিল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক কেরিয়ারের মাইলস্টোন। সর্বভারতীয় স্বীকৃতি পাওয়ার শামিল। এই আন্দোলনেই বাংলায় বামেদের পতনের ভিত গড়ে দিয়েছিল। তৃণমূলকে ব্যাপক মাইলেজ দিয়েছিল সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন। আর এবার সেই আন্দোলনকেই অস্বীকার করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সাফ জানালেন, “সিঙ্গুর কোনও আন্দোলনই ছিল না। সিঙ্গুর আন্দোলন ছিল শিল্প তাড়ানোর আন্দোলন।”
বিস্ফোরক মন্তব্যের পর রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে বিজেপির সভায় শুভেন্দু বলেছেন, “নন্দীগ্রামের আন্দোলন ছিল কৃষক-হত্যার প্রতিবাদে।” লালকৃষ্ণ আডবানির নেতৃত্বে বিজেপি এসে উদ্ধার করেছিল। প্রসঙ্গত, সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রাম আন্দোলন, দুই ক্ষেত্রেই তৃণমূলে ছিলেন শুভেন্দু। সেই সময় মমতার বড় হাতিয়ার ছিলেন তিনি। এখন বিজেপিতে যাওয়ার পর আন্দোলনকেই অস্বীকার করছেন বিজেপি নেতা।
শুভেন্দু আরও বলেছেন, “২৩৫-৩০ এর কথা বলত কেউ কেউ। আমার নেতৃত্বে জনগণ যা করে দিয়েছিল তার পর আর কেউ ২৩৫-এর কথা বলত না। পতাকরা সরিয়ে রেখে আন্দোলন করে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি।” এর পরই তাঁর দাবি, “সিঙ্গুরের আন্দোলন কোনও আন্দোলনই নয়। এটি শিল্প তাড়ানোর আন্দোলন।”
উল্লেখ্য, এর আগেও নন্দীগ্রাম আন্দোলনে বিজেপির ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছিলেন শুভেন্দু। গত বছর নভেম্বরে বলেছিলেন, “লালকৃষ্ণ আডবানি না এলে নন্দীগ্রামে কেউ ঢুকতেও পারত না। নন্দীগ্রাম নিয়ে বিজেপি সাংসদরা লোকসভা অচল করে দিয়েছিলেন। শিকড় গভীরে চলে গিয়েছে, উপড়ানো মুশকিল। আমি লক্ষ্মণ শেঠকে হারিয়েছিলাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও হারিয়েছি। সবাইকে এককাট্টা হতে হবে। আমাদের লড়াই করতে হবে। অনেক ফলস কেস রয়েছে। সব কেস সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করেছি।”
শুভেন্দুর এই শোরগোল ফেলে দেওয়া দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে তৃণমূলও। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, “এতদিন একরকম জানতাম। এখন তো দেখছি ও গন্ডার প্রজাতির। এখন পিঠে সুড়সুড়ি দিলে ১০ বছর বাদে হেসে ওঠে। সিঙ্গুল আন্দোলন যখন হয় তখন তৃণমূল ক্ষমতায় ছিল না। পরে আদালতে প্রমাণিত হয়, আন্দোলনটি বৈধ ছিল। জমি অধিগ্রহণ ভুল হয়েছিল সেটা সুপ্রিম কোর্ট বলে দেয়। ওটা ২০০৫-০৬-০৭ সালের আন্দোলন। তার পর শুভেন্দু তৃণমূলের সাংসদ হয়েছেন। ওঁর বাবা-সহ গোটা পরিবার তৃণমূলের মন্ত্রী-সাংসদ হয়েছেন। তা হলে ওঁরা ওই পদগুলি নিলেন কেন? কেন ক্ষমতা ভোগ করলেন? নন্দীগ্রাম মানুষের আন্দোলন ছিল, মমতাদি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অন্য অনেক দল ছিল। পরে তাঁর প্রতিনিধি করে শুভেন্দুকে পাঠানো হয়েছিল।”
এই বিষয়ে বামেদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতার বেফাঁস মন্তব্য নিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “প্রথমত ওটা যদি শিল্প তাড়ানোর আন্দোলন হয়ে থাকে বলে উনি মনে করেন, ওই শিল্প তাড়ানোর আন্দোলনে উনিও অংশীদার ছিলেন। দ্বিতীয়ত, উনি এখন যে দল করেন, সেই বিজেপি আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। উনি কি বলছেন বিজেপি নেতারা অন্যায় করেছিলেন?”