Swami Vivekananda: 'ভারতবর্ষকে জানতে গেলে জানতে হবে বিবেকানন্দকেও'। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই বিখ্যাত উক্তিই প্রমাণ করে দেয় স্বামী বিবেকানন্দের মত ও পথ ভারতে আজও কতটা প্রাসঙ্গিক। এহেন বীরকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই পূর্ব বর্ধমানের কালনার দত্ত দ্বারিয়াটন গ্রামের বাসিন্দাদের। কারণ এই গ্রামই ছিল বিবেকানন্দের পূর্ব পুরুষদের আদি নিবাসস্থল। দীর্ঘকাল এলাকার বাসিন্দারাই আগলে রেখেছিলেন ৪৬ শতক জমি নিয়ে থাকা বিবেকানন্দের পৈতৃক ভিটে। অবশ্য ওই ভিটে এখন রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশনের তত্ত্বাবধানে।
পৈতৃক বাড়ি দত্ত দ্বারিয়াটন গ্রাম হলেও বিবেকানন্দের জন্ম কলকাতায়। ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতার সিমুলিয়া অঞ্চলের হিন্দু পরিবারে বিবেকানন্দ জন্মগ্রহন করেন। বাবা বিশ্বনাথ দত্ত এবং মা ভুবনেশ্বরীদেবী আদর করে নরেন্দ্রনাথকে 'বিলে' নামে ডাকতেন। বিবেকানন্দের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতার মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে। পরে তিনি জেনারেল অ্যাসেম্বলি অর্থাৎ বর্তমানের স্কটিশ চার্জ কলেজ থেকে ১৮৮৪ সালে সসন্মানে বি এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর আইন নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলেও বাবার আকস্মিক মৃত্যুর কারণে বিবেকানন্দের সেই ইচ্ছা অপূর্ণই রয়ে যায়।
তা নিয়ে তাঁর আক্ষেপের শেষ ছিল না। তবে রামকৃষ্ণদেব এবং সারদা মায়ের সান্নিধ্য পাওয়ার পর থেকে বিবেকানন্দের চিন্তা ও মনন সবই বদলে যায়। তিনি হয়ে ওঠেন আপাদমস্তক মানবতাবাদী। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি শিক্ষার প্রসার ও মানবসেবায় ব্রতী থাকেন। সেই লক্ষ্যেই তিনি গড়ে তোলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন।
পৈতৃক বাড়িতেই রয়েছে বিবেকানন্দের এই মূর্তি।
দেশের প্রতি বিবেকানন্দের শ্রদ্ধা ছিল অগাধ। তাই রবীন্দ্রনাথের মতই সমাজ সংস্কারক চার্লস ফ্রিয়ার অ্যান্ড্রুজও বিবেকানন্দের তারিফ করেছিলেন। অ্যান্ড্রুজ বলেছিলেন, “স্বামী বিবেকানন্দের নির্ভয় দেশাত্ববোধ ও জাতীয়তাবাদী
আন্দোলন, ভারতের নবজাগরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। এককভাবে এমন অবদান অন্য কেউ আর রাখতে পারেননি।" রবীন্দ্রনাথ ও চার্লস ফ্রিয়ার অ্যান্ড্রুজের ভাবনার সঙ্গে কালনা ২ ব্লকের আনুখাল গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দ্বারিটান গ্রামের বাসিন্দাদের ভাবনাও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। তাই দত্ত পরিবারকে মর্যাদা দিয়ে তাঁরা গ্রামের নাম যেমন দত্ত দ্বারিয়াটন রেখেছেন। তেমনই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত উচ্চ বিদ্যালয়ের নামও রাখা হয়েছে দত্ত দ্বারিয়াটন স্বামী বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়।
বর্ধমানের ইতিহাস গবেষক সর্বজিত যশের কথায়, “একথা ঠিক, একটা সময়ে কালনার দ্বারিয়াটন গ্রামে দত্ত পরিবারের বসবাস ছিল। ভূপেন্দ্রোনাথ দত্ত তাঁর 'আমার কথা অমর কথা’ বইয়ে সেকথা বিস্তারিতভাবে লিখেছেন। পরবর্তী সময়ে দত্ত পরিবার কলকাতা শহরে চলে যায়। তবে বিবেকানন্দ ও দত্ত পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধায় কোনও ছেদ পড়েনি দত্ত দ্বারিয়াটন গ্রামের বাসিন্দাদের। তাই গ্রামবাসীদের দাবি মেনে স্থানীয় পঞ্চায়েত পাঁচিল দিয়ে দত্ত পরিবারের পৈতৃক ভিটের সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যায়নের ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি সেখানে স্বামী বিবেকানন্দের পূর্ণাবয়ব একটি মূর্তিও বসানো হয়েছে।"
আরও পড়ুন- ED Raid: সাতসকালে ED-র ত্রিশূল হানা! একযোগে রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী, বিধায়ক-নেতার বাড়িতে অভিযান
তিনি আরও বলেন, "স্বামী বিবেকানন্দের ভিটের তথ্য প্রমাণ ও বংশ তালিকা পোস্টার আকারে সেখানে রাখা হয়েছে। গত বছর ১২ জানুয়ারি বিবেকানন্দের জন্ম দিবসের দিনে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি রামকৃষ্ণ মিশনকে হস্তান্তর করা হয়। আজ শুক্রবার গোটা দেশের পাশাপাশি দত্ত দ্বারিয়াটন গ্রামেও ঘটনা করে পলিত হবে স্বামী বিবেকানন্দের ১৬২তম জন্ম দিবস। তার জন্যে বিবেকানন্দের পৈতৃক ভিটে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।"
বর্ধমানের অপর ইতিহাস গবেষক রমজান আলি বলেন, "দত্ত দ্বারিয়াটন গ্রাম ছাড়াও আরও কয়েকটি
বিষয়ে বর্ধমানের সঙ্গে বিবেকান্দের যোগসূত্র পাওয়া যায়। বিবেকানন্দ কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে পড়ার সময়ে তাঁর সহপাঠী ছিলেন বর্ধমানের রাজ পরিবারের পুত্র আফতাব চাঁদ। এছাড়াও বিবেকানন্দ যখন কলেজে পড়ছিলেন তখন তদানীন্তন বর্ধমানের বিখাত ব্যক্তিত্ব নলীনাক্ষ বসুর ছেলেও ছিলেন বিবেকান্দর সহপাঠী। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। সেই সুবাদে একদিনের জন্যে বিবেকানন্দ বর্ধমানে এসেছিলেন বলে শোনা যায়।"