Advertisment

ছাত্র-মৃত্যুতে তোলপাড় যাদবপুর,পড়ুয়াদের ক্লাসে পাঠিয়ে ক্যাম্পাসে উদ্বিগ্ন বাবা-মা'রা

সকাল থেকে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছবি

author-image
Sayan Sarkar
New Update
swapnadeep kundus death The situation of jadavpur university is still tense

স্বপ্নদীপ-মৃত্যুতে তোলপাড় যাদবপুর, পড়ুয়াদের ক্লাসে পাঠিয়ে ক্যাম্পাসে উদ্বিগ্ন বাবা-মা'রা

'ইন্সটিউশ্যানাল মার্ডার' অথবা প্রাতিষ্ঠানিক হত্যার তত্ত্ব নিয়ে সকাল সকাল বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভের জেরে উত্তপ্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের। এদিন সকাল ১০ টা বাজতেই না বাজতেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে তোলপাড় পড়ে যায়। ক্যান্টিন থেকে শুরু করে ক্লাসরুম সর্বত্র একই চর্চা। বিচার চাই মৃত ছাত্রের। শহরতলির এই মেধাবী ছাত্রের এমন করুণ পরিণতি যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না সহপাঠী থেকে সিনিয়ররাও। হোস্টেলে কারা এই ঘটনায় সঙ্গে যুক্ত? কেন এখনও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সামনে আনা হয়নি এই নিয়ে দফায় দফায় চলে বিক্ষোভ। এমন ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিমা এতে ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষক-ছাত্রদের একাংশ।

Advertisment

প্রথম বর্ষের বাংলার পড়ুয়া এই মেধাবী ছাত্রের মৃত্যু প্রসঙ্গে এদিনই সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। তিনি এদিন বলেন, ‘একটা প্রশ্নের মুখে আমরা পড়ে গেলাম। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক একটা ব্যাপার। একটা পাঁচতারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা ঘটে গেল। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। র‍্যাগিং মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলব যাদবপুরকে।’ কিন্তু এই আশ্বাসে মোটেও সন্তুষ্ট নয় পড়ুয়া থেকে অভিভাবকরা। কেন এতদিনেও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হল না উঠেছে সেই প্রশ্ন। পাশাপাশি অ্যান্টি র‍্যাগিং সেলের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে বিস্তর প্রশ্ন।

এদিন, যাদবপুরে প্রথম বর্ষের ছাত্র মৃত্যুর প্রতিবাদে এদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বেশ কয়েকটি মিছিল হয়। একদিকে AISA-এর বিক্ষোভ মিছিল থেকে তৃণমূল বিরোধী স্লোগান ওঠে। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অরবিন্দ ভবনের সামনে থেকে এদিন মিছিল করেন তৃণমূলপন্থী শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী ও পড়ুয়ারা। দাবি ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বর ও হোস্টেলে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো সহ ওই ছাত্রের মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত।

publive-image

এদিকে প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রের মৃত্যুতে বারংবার র‍্যাগিংয়ের তত্ত্বই খাড়া করেছিলেন অভিভাবকরা। এবার সেই র‍্যাগিং তত্ত্বেই সিলমোহর খোদ রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু। রাজ্যের পাঁচতারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিংয়ের জেরেই প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়ার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে বলে এদিন কার্যত মেনে নিলেন রেজিস্ট্রার। ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়েছেন তিনি। পড়ুয়াদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরদারি আরও বাড়ানোর আশ্বাস স্নেহমঞ্জু বসুর। ‘র‍্যাগিং-মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে চাই যাদবপুরকে।’ সংবাদমাধ্যমে এদিন বলেছেন রেজিস্ট্রার।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মর্মান্তিক পরিণতিতে রাজ্যের শিক্ষাজগতে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। নদিয়ার বগুলা থেকে রাজ্যের স্বনামধন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে এসেছিলেন ওই ছাত্র। অভিযোগ, সিনিয়রদের র‍্যাগিংয়ের শিকার হতে হয় তাঁকে। হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর।

আরও পড়ুন: < এতদিন পর কেন যাদবপুরে? ফোন কেন বন্ধ ছিল? প্রশ্ন শুনেই কেঁদে ফেলেন রেজিস্ট্রার >

এই ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ চৌধুরীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাঁকে জেরা করেই গ্রেফতার করা হয় মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্ত নামে আরও দুই পড়ুয়াকে। এঁরাও ওই ছাত্রকে হেনস্থায় সমানভাবে যুক্ত ছিল বলে মনে করছে পুলিশ। তবে এঁরা ছাড়াও আরও কয়েকজন সিনিয়র ছাত্রেরও এই কাণ্ডে যোগ রয়েছে বলে সন্দেহ পুলিশের।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ এবার মেনে নিয়েছেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু। তিনি এদিন বলেন, ‘দোষীরা যেন শাস্তি পায়। এই ধরনের র‍্যাগিংয়ের ঘটনা আর যাতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে না ঘটে। এবার নজরদারি আরও বাড়ানোর চেষ্টা করব। আমাদের নিউ বয়েজ হস্টেলেও যাব। ওখানে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলব। নিরাপত্তারক্ষীদেরও নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দেব। এটাই আমার প্রথম কর্তব্য।’

লিখিতভাবে অভিযোগ না এলে র‍্যাগিংয়ের ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করাটা সমস্যার হয় বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। তাঁর কথায়, ‘এর আগে ছাত্ররা ভয়ে হোক বা যে কোনও কারণেই হোক কারও নাম নিয়ে আমাদের কাছে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ না এলে তো কোনও ব্যবস্থা আমরা নিতে পারি না। তবে অভিযোগ এলে অ্যান্টি র‍্যাগিং কমিটি বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। তবে এবার যদি তাঁরা মুখ খোলে আমাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।’

এদিন সকাল থেকে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছবি। ক্যাটিনে পড়ুয়াদের সঙ্গে তাদের পাশে রয়েছেন অনেক অভিভাবকরাই। অনেকেই প্রথম বর্ষের মেধাবী পড়ুয়া স্বপ্নভঙ্গে মর্মাহত, একই সঙ্গে আতঙ্কগ্রস্ত। যাদবপুরের মত প্রথমসারির বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াটা মেধাবী পড়ুয়াদের কাছে একটা স্বপ্ন। আর সেখানে পড়াশুনার সুযোগ পেয়েও যদি স্বপ্নভঙ্গ হয়, র‍্যাগিংয়ের স্বীকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয় এর চেয়ে মর্মান্তিক আর কিছুই হতে পারেনা,জানিয়েছেন অভিভাবকদের একাংশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ আর্টস, সুচরিতা চট্টোপাধ্যায় ছাত্রমৃত্যুর প্রসঙ্গে বলেছেন, "মর্মান্তিক ঘটনা। এমন ঘটনা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ইতিমধ্যেই আমরা প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মনের আতঙ্ক দূর করার চেষ্টা করছি। প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের নিয়ে আজ আমাদের এক বৈঠক রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকের তরফে আজ পড়ুয়াদের নতুন হোস্টেলে ঘুরে দেখার পাশাপাশি নিরাপত্তা কর্মীদের বেশ কিছু নির্দেশ দেওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে"। স্বপ্নদীপের মৃত্যু প্রসঙ্গে এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য্য বলেন, " নিন্দনীয় ঘটনা, এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের নিরাপত্তা যদি বিশ্ববিদ্যালয় দিতে না পারে তার চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না"।

Jadavpur University
Advertisment