দুর্নীতিকাণ্ডে নাম উঠেছে প্রমোটার অয়ন শীলের 'ঘনিষ্ঠ' শ্বেতা চক্রবর্তীর। যা নিয়ে জোর চর্চা। শেষ পর্যন্ত বুধবার রহস্যের মোড়ক সরিয়ে সামনে এলেন শ্বেতা চক্রবর্তী। অয়ন শীলের সঙ্গে তাঁর কীভাবে পরিচয়? কী সম্পর্ক? গাড়ি কার? কেন বিপুল অর্থের লেনদেন? সব নিয়েই এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাতকারে জবাব দিয়েছেন শ্বেতা।
অয়ন শীলকে চেনেন, তাঁর সঙ্গে কীভাবে পরিচয় হয়েছিল তাঁর? উত্তরে শ্বেতা চক্রবর্তী বলেছেন, 'হ্যাঁ আমি ওনাকে (অয়ন শীল) চিনি, পরিচয়ও ছিল। আমি চুঁচুড়া ওনার থেকে ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। আমার কাছে ফ্ল্যাটের এগ্রিমেন্ট রয়েছে। পরবর্তীকালে ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার কারণে হ্যান্ডওভার করেদিই। সেই টাকা উনি ফেরত দেন।'
গত শনি ও রবিবার অয়নের সল্টলেকের বাড়িতে তল্লাশিতে উদ্ধার হয় বহু নথি। যাতে শ্বেতার নাম পাওয়া গিয়েছে। এমনকী একটি হন্ডা সিটি গাড়ি কেনারও নথি মিলেছে, যা শ্বেতা ব্যবহার করতেন। ইডি আধিকারিকদের মতে ওই গাড়ি শ্বেতাকে উপহার দিয়েছিলেন অয়ন। এই প্রসঙ্গে শ্বেতার জবাব, 'আমি ওনার প্রোডাকশন হাউজে কাজ করেছি, সেই কারণে উনি আমাকে ওই গাড়িটি ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন। আমি পারিশ্রমিকবাবদ ওনার থেকে টাকা পেতাম, টাকার বদলে ওই গাড়ি দেওয়া হয়।'
এবিএস ইনফোজোন প্রাইভেট লিমিটেড বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগের টেন্ডার পেতেন। এই সংস্থার মাধ্যমেই অয়ন সীল নিয়োগ দুর্নীতি চালাতেন বলে অভিযোগ। এবিএস ইনফোজোন প্রাইভেট লিমিটেড-ই ‘কাবাড্ডি কাবাড্ডি’ সিনেমার প্রযোজনার দায়িত্বে ছিল। ওই ছবিতেই ডেবিউ করেছিলেন শ্বেতা চক্রবর্তী। ইডি সূত্আরে খবর, প্রথম সিনেমাতেই মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন শ্বেতা।
কামারহাটিতে নাকি একটি ফ্ল্যাটে মামা ভাগ্নি পরিচয়ে থাকতেন অয়ন ও শ্বেতা। স্থানীয়রাই এই তথ্য দিয়েছেন। যা 'মিথ্যা' বলে জানাচ্ছেন শ্বেতা চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, 'সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। অয়ন শীল ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন না।'
উদ্ধার হওয়া নথিতে দেখা যাচ্ছে, অয়ন শীলেরঅ্যাকাউন্ট থেকে শ্বেতা চক্রবর্তীর অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ করে তিনবার, ২০ লাখ ১বার ও একবার ৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। কেন এত অর্থের লেনদেন? শ্বেতার জবাব, 'চুঁচুড়ার যে ফ্ল্যাট আমি হ্যান্ডওভার করেছিলাম তারই অর্থ আমাকে উনি ব্যাঙ্কে ফিরিয়েছিলেন। ওটা আমার ফ্ল্যাট কেনার টাকা।'
কীভাবে অয়নের সঙ্গে তাঁর পরিচয়? শ্বেতা দাবি করেছেন যে, 'আমি পঞ্চায়েত দফতরে চাকরি করতাম। উনিও ওখানে চাকরি করতেন। ২০১৮ সালের আগে, ওই ২০১৭ সাল থেকে আমাদের যোগাযোগ।'
শ্বেতা অয়ন শীলের এবিএস ইনফোজন প্রোডাকশন হাউজে কাজ করতেন বলে দাবি করলেও ওই সংস্থার অন্যান্য কাজ বা চাকরি দুর্নীতি নিয়ে কিছুই জানে না বলে দাবি করেছেন সাক্ষাৎকারে। শ্বেতার পারিশ্রমিকের কোনও লিখিত চুক্তি নেই, মৌখিক চুক্তিতেই তিনি অয়ন সীলের সংস্থায় কাজ করতেন বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, 'অয়নের স্ত্রী কাকলী শীলের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক ভাল।'
তদন্তকারী সংস্থা ডাকলে তিনি সহায়তা করবেন বলেও সাফ জানিয়েছেন প্রমোটার অয়ন শীলের 'ঘনিষ্ঠ' শ্বেতা চক্রবর্তী।