কালিম্পং-এর একটি সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুমুদিনী হোমসের পাইপ এবং ড্রামস ব্যান্ড, আগামী ১৫ জুলাই সুইজারল্যান্ডের বাসেলে তাদের পাইপ, খুকরি ও ড্রাম ব্যান্ডের চমক দিয়ে দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করতে প্রস্তুত। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক ব্যান্ডের কার্নিভাল ‘বাসেল ট্যাটু’তে এবার অংশ নিচ্ছেন কালিম্পংয়ের কুমুদিনী হোমস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্ররা। পড়ুয়াদের সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা। রবিবার বিমান বাতিলের কারণে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়ারা। ত্রাতা হিসাবে এগিয়ে আসেন সাংসদ নিজেই। ব্যবস্থা করেন পড়ুয়াদের যাওয়ার। তাঁর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলেই।
১৫ জুলাই থেকে শুরু হবে এই কার্নিভ্যাল চলবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। ভারতের একমাত্র ব্যান্ড হিসাবে বাসেল ট্যাটুতে অংশ নিতে চলেছে কুমুদিনী হোমস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্ররা। স্কুলের পাইপ এবং ড্রাম ব্যান্ডটি ভারত থেকে প্রথম ব্যাসেল ট্যাটুতে পারফর্ম করার জন্য নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস রচনা করেছে, একটি দুর্দান্ত বার্ষিক সামরিক ইভেন্ট, যেখানে অভিজাত সামরিক এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক ব্যান্ড কার্নিভালে তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করবে। ট্যাটু হল মূলত মিউজিক্যাল পারফরম্যান্স বা অনুষ্ঠান যাতে মার্চিং ব্যান্ড এবং নির্ভুল ড্রিলস অন্তর্ভুক্ত থাকে।
সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় স্কুলের শিক্ষক এবং ব্যান্ড প্রশিক্ষক প্রিয়দর্শি লামা,বলেন, “স্কুলের ২০ জন ছাত্র বিশেষ এই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করছে। এটা সমগ্র দেশ তথা স্কুলের কাছে এক গর্বের বিষয়। কুমুদিনী হোমসের পাইপ এবং ড্রামস ব্যান্ডও মেগা ইভেন্টে বিখ্যাত 'খুকরি ড্যান্সেও’ অংশ নেবে। ২০১০ সাল থেকে স্কুলের ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। লামা বলেছেন যে ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স, সিভিল প্রোটেকশন এবং স্পোর্ট অফ সুইজারল্যান্ডের তরফে ছাত্রদের এবং তাঁর যাওয়া আসা থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে”।
তিনি বলেন, “১৯৪০-এর দশকে চালু হওয়া কালিম্পং-এর প্রথম স্কুলগুলির মধ্যে পাইপ এবং ড্রামস ব্যান্ডে কুমুদিনী হোমস অন্যতম”। ১৯৪০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এই ব্যান্ড তাদের পারফর্মে সকলের নজর কেড়েছে তারপর যন্ত্র এবং প্রশিক্ষকের অভাবে বেশ কিছুদিন এই ব্যান্ডটি বন্ধ থাকে। ২০১০ সাল থেকে এটি আবার চালু করা হয়”।
লামা এছাড়াও স্কুলের একটি প্রাক্তন ছাত্র সংগঠন, শিক্ষক এবং সমস্ত পৃষ্ঠপোষক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের স্কুলের তরফে শুভেচ্ছাবার্তা জানানো হয়েছে বিগত ১২ বছর ধরে ব্যান্ডটি যারা এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। কুমুদিনী হোমসের প্রধান শিক্ষক ভূপেন কার্তক বলেন, “বাসেল ট্যাটুর জন্য স্কুল ব্যান্ডের নির্বাচন শুধুমাত্র কুমুদিনী এবং কালিম্পং জেলার জন্য গর্বের মুহূর্ত নয়, সমগ্র দেশের জন্য এটা এক গর্বের মুহুর্ত। ১০ জুলাই মুম্বই থেকে বাসেলের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছে দলটি। মোট ২১ দিন সুইৎজারল্যান্ডে থাকবে গোটা ব্যান্ড। একাধিক ইভেন্টে অংশ নেবে তারা”।
আরও পড়ুন: <ব্রেন ডেড রোগীর শরীরে বসল শূকরের হৃৎপিণ্ড, নজির গড়লেন চিকিৎসকরা>
এদিকে বিদেশের মাটিতে খুকরি ডান্স’ করবে কালিম্পংয়ের স্কুলের ছাত্ররা তাতে রীতিমত উচ্ছ্বসিত দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা। ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তাঁদের বিদেশ যাত্রায় সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সাংসদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্কুলের ছাত্ররা। সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাংসদ বলেন, “ দার্জিলিংয়ের নাম উজ্জ্বল করতে যে পড়ুয়ারা বিদেশের মাটিতে দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে যাচ্ছেন তাদের পাশে সব রকম ভাবে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। বিদেশের মাটিতে কালিম্পং-এর খুকরি ডান্স অবশ্যই হবে এবং আমি নিশ্চিত পড়ুয়ারা দেশের নাম, সর্বপরি দার্জিলিংয়ের নাম সারা বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল করবে”।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য রবিবার রাত্রে বাগডোগরা থেকে তাঁদের বিমান বাতিল হয়ে যায়। আটকে পড়ে কুমুদিনী গার্লস হোমের পড়ুয়ারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের হতাশা তুলে ধরেন পড়ুয়ারা। এরপরই দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তার কাছে সাহায্যের আবেদন জানান পড়ুয়া এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন। তার উদ্যোগেই সোমবার দিল্লি গামী বিমানে ওঠেন পড়ুয়ারা। সংবাদ মাধ্যমের সামনে সাংসদ বলেন যে কোন মূল্যে পড়ুয়াদের বাসেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে কোন ভাবেই বিশ্বমঞ্চের এমন সুযোগ হাতছাড়া হতে দেওয়া যাবে না”। সাংসদের এই উদ্যোগকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন সমাজের সকল স্তরের মানুষ।