বাইকে করে এসে ঘরে ঢুকে ফিল্মি কায়দায় ব্যাবসায়িক কথাবার্তা বলার মাঝে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে নিউ টাউনের প্রোমোটারকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে অবলীলায় এলাকা থেকে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা। চাঞ্চল্যকর ও মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাতে নিউ টাউনের পাথরঘাটায়। এই খুনের ঘটনায় আবারও সামনে চলে এসেছে রাজারহাটের সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্য। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ সত্ত্বেও আদৌ কি সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্যে রাশ টানা গিয়েছে?
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রের খবর, রবিবার রাতে পাথরঘাটার মন্ডলপাড়ার চঞ্চল মণ্ডলের বাড়িতে দুটি বাইকে চড়ে চারজন যুবক আসে। দুজন বাড়ির ভিতরে ঢুকে চঞ্চলের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাও বলে। তার কিছুক্ষণের মধ্যে গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা, শোনা যায় চঞ্চলের আর্তনাদ। বাড়ির লোকজন ঘরে ঢুকে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছেন চঞ্চল। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
চঞ্চল মন্ডল পেশায় ছিলেন আমিন, অর্থাৎ যাঁরা জমি মাপজোকের কাজ করেন। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পাশাপাশি তিনি জমির দালালিও করতেন। সম্প্রতি প্রোমোটিং ব্যবসাতেও টাকা ঢেলেছিলেন। এই কাজে সঙ্গী ছিলেন তাঁর ভাই দেবব্রত
এবং পার্টনার বৃন্দাবন বিশ্বাস। খুনের ঘটনায় তাঁর ভাই ও পার্টনারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা।
ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক টিম
চঞ্চলের মেয়ে কোয়েল সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, "বাড়ির সামনে চারজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওদের জিজ্ঞাসা করি, কেন দাঁড়িয়ে রয়েছেন? ওরা বলে, চঞ্চলের সঙ্গে দেখা করতে চাই। জানতে চাইলাম কী ব্যাপার। ওরা বলল, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে চাই। জিজ্ঞাসা করল বাবা বাড়ি আছেন কিনা। বললাম বাড়ি নেই।" এরপর তারা মৃতের ছোট ভাই দেবকুমারের সঙ্গে দেখা করে। অন্য ভাই দেবব্রতর দাবি, "গতকাল সকালে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে রফিকুল শেখ নামে একজন মুর্শিদাবাদের একটা জমির কাগজ দিয়ে যান। জমির প্ল্যান করার জন্য ৫০০ টাকা দেওয়ার কথা হয়। দুপুরে ভাই ফোন করে প্ল্যান নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে।"
সেইমত সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ দুষ্কৃতীরা বাড়িতে চলে আসে। দেবব্রতর সঙ্গে কথাবার্তার পর তিনি প্ল্যান দিয়ে দেন চারজনের হাতে, বিনিময়ে ৫০০ টাকাও দেয় তারা। এরপর ওই দুষ্কৃতীরা চঞ্চলের সঙ্গে কথা বলতে চায়। চঞ্চল সেই সময় পাথরঘাটা বাজারে ছিলেন। ভাই ফোন করে তাঁকে বাড়িতে ডাকেন, এবং তিনি এসে বেশ কিছুক্ষণ ঘরের মধ্যে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। দেবকুমার জানান, মুর্শিদাবাদের জমি মাপার বিষয়েই কথা হচ্ছিল। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরনোর সময় হঠাৎ চঞ্চলকে লক্ষ্য করে পরপর গুলি চালানো হয়। পাঁচ রাউন্ড গুলি চলেছে বলে জানা গিয়েছে ফরেনসিক দলের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে, যার মধ্যে তিনটি গুলি চঞ্চলের মাথায় ও বুকে লাগে।
খবর পেয়ে প্রথমে ঘটনাস্থলে যায় নিউ টাউন থানার পুলিশ, এবং তারপর বিধাননগর গোয়েন্দা শাখার পুলিশ। পরিবারের প্রত্যেকের সাথে কথা বলে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে নিউটাউন থানার পুলিশ। এদিকে, খুনের পেছনে ব্যক্তিগত আক্রোশ নাকি অন্য কিছু, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যেহেতু জমিজমা নিয়ে কাজ করতেন চঞ্চল, টাকাপয়সা সংক্রান্ত বিবাদের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারী অফিসাররা।