আর বিরোধিতা নয়। বরং উল্টো পথে হেঁটেই জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের সায় দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশিকা কার্যকর করতে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে উচ্চ-শিক্ষা দফতর। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করতে হবে বলে নির্দেশিকায় উল্লেখ রয়েছে।
জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী চার বছরে মিলবে স্নাতক ডিগ্রি। মূলত ক্রেডিড বেসড সিস্টেম প্রয়োগের উপরই জোর দিয়েছে শিক্ষা দফতর। পাশাপাশি, নয়া শিক্ষানীতি কার্যকরের জন্য পাঠ্যক্রমেও আদল-বদল করারও উল্লেখ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে উচ্চ-শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকায়।
নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে স্নাতক ডিগ্রির সময়কাল ৩ থেকে বাড়িয়ে ৪ বছর করা হয়। কিন্তু স্নাতকোত্তর ডিগ্রির মেয়াদ ২ বছর থেকে কমিয়ে ১ বছর করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্রেডিড বেসড সিস্টেম অর্থাৎ স্নাতকস্তরেই গবেষণার সুযোগ পাবে পড়ুয়ারা। ৪ বছরের স্নাতকস্তরের কোনও পড়ুয়া যদি কোনও বিষয়ে গবেষণা করতে ইচ্ছুক হন, তা হলে সে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রোজেক্ট বাছাই করতে পারবে। অনার্স ডিগ্রির পাওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট বিষয়টিতে গবেষণা করবে এবং স্পেশালাইজেশন করবে সেই পড়ুয়া। চার বছরের স্নাতকরা পিএইচডির জন্যও আবেদন জানাতে পারবেন। অবশ্য এক্ষেত্রে সেই পড়ুয়ার ন্যূনতম সিজিপিএ ৭.৫ হতে হবে।
কেন্দ্রের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই থেকেই সোচ্চার রাজ্য সরকার। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে একাধিকবার নিজের যুক্তি দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাহলে হঠাৎ কেন জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের সায় দিয়ে তা কার্যকর করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নির্দেশ দিল উচ্চ-শিক্ষা দফতর? এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।
উচ্চ শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, রাজ্যগুলিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চিঠিতে চার বছরের কোর্সের জন্য একটি নতুন পাঠ্যক্রম তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছে। সেখানে নাকি উল্লেখ, 'উচ্চ শিক্ষায় নতুন নিয়ম অনুসরণ না করলে ইউজিসি-র অনুদান পেতে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালির সমস্যা হতে পারে।'
উচ্চ-শিক্ষা দফতরের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুটা। সংগঠনের তরফে কেশব ভট্টাচার্যের দাবি, 'ইউজিসি অনুদান না পাওয়াই এর একমাত্র কারণ নয়। এর নেপথ্যে আরও অনেক কারণ রয়েছে। তাই রাজ্য সরকার বিজেপি-আরএসএস-এর নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।'
এসএফআই-এর রাজ্য সভাপতি প্রতীকুর রহমান তৃণমূল বিজেপি আঁতাঁতকে তুলে ধরেছে। তাঁর কথায়, 'মুখে বিজেপির প্রতিবাদ করলেও তৃণমূল সরকার বিজেপির শিক্ষা নীতিই গ্রহণ করছে। যা এটা প্রমাণ করে যে তৃণমূল আসলে ছদ্ম বিজেপি বিরোধী। সবটাই ওদের মুখোশ। এসএফআই নতুন শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।'