পুজো শেষে তৃণমূলে কাজিয়া ক্রমশ চড়ছে। মঙ্গলবারই উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করছিলেন তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়। অষ্টমীর দিন বিজেপির উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষের বাড়িতে সুদীপের যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাপস। জানিয়েছিলেন যে, সুদীপের সঙ্গেই সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী ও কল্যাণ চৌবেও। কাঠগড়েয় দলের প্রতি সাংসদের আনুগত্য। এই ইস্যুতে দলনেত্রী ঘনিষ্ঠ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি 'ডিভাইডেড লয়ালিস্ট' বলেও কটাক্ষ করেছেন বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক। তমোঘ্ন ঘোষের পরিবারের সঙ্গে সুদীপের যোগাযোগ সংক্রান্ত তাপসর রায়ের দাবিকে ওই দিনই মান্যতা দিয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। ফলে জোড়-ফুলের ভেতরে গুঞ্জন বাড়ছে। এই নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলও দলীয়ভাবে কিছু জানায়নি। ফলে নানা জল্পনা। এর মধ্যেই তাপস রায়ের বাড়িতে গেলেন কুণাল ঘোষ।
তাহলে কী তৃণমূলের অন্দরের নয়া সমীকরণ? নিজের বাড়িতে কুণাল ঘোষের পাশে বসে তাপস রায় বলেন, 'কুণাল এসেছেন, আমিও বসেছি, আলোচনা করছি। কোনও ব্যক্তির সঙ্গে আমার কোনও বিরোধ নেই। দলের আমি একজন বর্ষীয়ান কর্মী। নিজের উপলব্ধি থেকে বলছি যে, এটা ডিভাইডেট লয়ালিস্টদের সঙ্গে ডেডিকেটেড লয়ালিস্টদের লড়াই। যা হচ্ছে তা ঠিক নয়। এঠা শুধু পুজোর সময় হয়েছে তাই নয়, এটা তার আগেও হয়েছে। কর্মীদের কাছে কী জবাব দেব?'
দলনেত্রী বা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি কী জানাবেন তাপস রায়? বরাহনগরের বিধায়ক বলেন, 'দল সব জানে। প্রয়োজনে আবারও জানানো যেতে পারে।'
কুণাল ঘোষের মন্তব্য, 'বৌদির সঙ্গে বিজয়া করতে এসেছি। মমতাদির নেতৃত্বে, অভিষেকের তত্ত্বাবধানে তৃণমূল একেবারে ঠিকঠাক রয়েছে। কলকাতা উত্তরের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস দা এখানকার নেতা। ফলে ওনার কাছে অনেক খবর আসে, কর্মী ও ওনার নিজস্ব উপলব্ধি থেকে উনি কিছু কথা বলেছেন। এ নিয়ে আমরা আলোচনা করব।' কুণাল ঘোষের কথায়, 'আমি আজ বিজয়া করতে এসেছি। দলনেত্রীকে এ বিষয়ে জানানো নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।'
মঙ্গলবার কী বলেছিলেন তাপস রায়?
এতদিন কল্যাণ চৌবে ছিলেন বিজেপির উত্তর কলকাতা জেলা কমিটির সভাপতি। সদস্য তিনি এআইএফএফের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে দলে তাঁর জায়গায় দায়িত্বে আনা হয়েছে তমোঘ্ন ঘোষকে। মঙ্গলবার নিজের বাড়িতে বসে তাপস রায়ের দাবি করেন যে, ‘এ বার দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন তমোঘ্ন ঘোষের বাড়িতে আমন্ত্রিত ছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিমন্ত্রিতদের তালিকায় ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী ও কল্যাণ চৌবেও। প্রত্যেকেই পুজোর এক দিন সেখানে গিয়েছিলেন।’ তাহলে কী এই তিন রাজনীতিকের মধ্যে বৈঠক হয়েছিল? এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি তাপস রায়।
তাপস রায়ের কথায়, 'তমোঘ্নকে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি করতে চেয়ে ওঁকে দলনেত্রীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন সুদীপ। দরবারও করেছিলেন। এ কথা তো দলের সবারই জানা আছে।’ তারপরই তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি বলেছিলেন, ‘পার্টিতে এই মুহূর্তে ডেডিকেটেড লয়ালিস্ট আর ডিভাইডেড লয়ালিস্ট – দুই ভাগ হয়েছে। ডিভাইডেড লয়ালিস্টরা অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এদিকে দলনেত্রীকে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে দলেরই অনেকে ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে সঙ্গে বিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে সংগঠনের প্রতি অনুগত দলের উচিত তাঁদের প্রতি আস্থা রাখা।’