রথযাত্রা, লোকারণ্য, ধুমাধাম সবই আছে। রথে নেই শুধু বলরাম, সুভদ্রা ও জগন্নাথ। রথ বলতে আমরা পুরীর জগন্নাথদেবের রথকেই বুঝি। এরাজ্যের কলকাতার ইস্কন রথ, হুগলির মাহেশ ও মহিষাদলেও প্রাচীন রথযাত্রা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। সেখানেও বলরাম, সুভদ্রা ও জগন্নাথ রথে পরিক্রমা করেন। ব্যতিক্রম শুধু তারাপীঠের রথে। কারণ তারাপীঠের রথে অধিষ্ঠাত্রী মা তারা।
দুই বছর পর ফের রথে অধিষ্ঠাত্রী হলেন মা তারা। করোনা অতিমারি কাটিয়ে তাই এবার তারাপীঠে মা তারার রথ যাত্রা দেখতে উপচে পড়া মানুষের ভিড়। বহু মানুষ পরিবারের মঙ্গল কামনায় হাজার হাজার যাত্রীদের মধ্যে মণ্ডা, মিঠাই বিতরণ করলেন। মায়ের কাছে কামনা করলেন দেশের ভালো হোক, দশের ভালো হোক।
তারাপীঠের রথযাত্রা কবে থেকে শুরু হয়েছিল তার দিনক্ষণ এখন আর তেমন কারও মনে নেই। তবে মন্দিরের সেবাইত, সাহিত্যিক প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই থেকে জানা যায়, তারাপীঠের বিখ্যাত সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথ তারাপীঠের রথের প্রচলন করেছিলেন। সেই সময় একটি পিতলের রথ তৈরি করা হয়েছিল। সেই রথেই আজও মা তারাকে বসিয়ে ঘোরানো হয়।
তারা মায়ের একটি রথ ঘর তৈরি করা হয়। যুক্তফ্রন্টের আমলে ওই রথ ঘরের উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়। সারা বছর ওই রথ ঘরেই পিতলের রথকে সংরক্ষিত রাখা হয়। রথ ঘরটি নির্মাণ করেন জনৈক মা তারার ভক্ত আশালতা সাধু খাঁ।
আরও পড়ুন- ধর্ম যার যার, উৎসব সবার, রথযাত্রায় এগাঁয়ের হিন্দু-মুসলিম মিলে মিশে একাকার
করোনা অতিমারির কারণে বছর দুয়েক বন্ধ ছিল রথ যাত্রা। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলে তারাপীঠ রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে পুরনো ধুমধামের নজরকাড়া ছবি। প্রাচীন রীতি মেনে শুক্রবার বিকেলে মা তারাকে রথে বসিয়ে ঘোরানো হল তারাপীঠ। বিকেলে মা তারাকে মূল মন্দির থেকে বের করে রথে বসানো হয়। তারপরই হাজার হাজার পূর্ণার্থী রথের রশিতে টান দেন।
তারা মা-র সেবাইত সংঘের সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, “রথ কবে থেকে শুরু হয়েছিল তার দিনক্ষণ এখন আর বলা সম্ভব নয়। তবে প্রতি বছর মা তারাকে রথে চড়িয়ে তারাপীঠ প্রদক্ষিণ করিয়ে সন্ধ্যা আরতির আগে মূল মন্দিরে বসানো হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত দুই বছর করোনা অতিমারির কারণে রথযাত্রা বন্ধ করা হয়েছিল। এবার করোনা কিছুটা কমে যাওয়ায় রথযাত্রা শুরু করা হল। এই রথ থেকে ভক্তদের উদ্দেশে প্যাড়া, বাতাসা, মণ্ডা বিতরন করা হয়। সেই প্রসাদ পেতে ভক্তদের মধ্যে হুটোপুটি পড়ে যায়। কারণ এই প্রসাদ গ্রহণ করলে পুনর্জন্ম হয় না বলে কথিত আছে।'
আরও পড়ুন- ইসকনের রথের রশিতে টান মুখ্যমন্ত্রীর, রঙিন উৎসবে সামিল সোহম-নুসরতরাও
কলকাতার সল্টলেক থেকে তাড়াপীঠে আগত ভক্ত টিঙ্কু সাহা বলেন, “মা তারা ডেকেছেন তাই তারাপীঠে আসতে পেরেছি। তবে এই পুণ্য তিথিতে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। কারণ এখানে রথযাত্রা একদম অন্যরকম। এখানে রথে মা তারা অধিষ্ঠাত্রী। রথের দড়িতে টান দিতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। ইচ্ছে থাকলেও মা তারা না চাইলে এই পুণ্য লাভ সবার হয় না।”