সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সন্ত্রাস, রিগিংয়ের অভিযোগের মধ্যেও বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে প্রায় ১০ হাজার আসনে জয়ী হয়েছেন। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের তুলনায় যা প্রায় দ্বিগুণ। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েত সমিতিতে বিজেপি পেয়েছে ৯৮২টি আসন। জেলা পরিষদে পেয়েছে ২১টি আসন। কিন্তু, এই সাফল্যের মধ্যেও অন্ধকারটা হল, গত বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ৩৮% ভোট পেয়েছিল বিজেপি। আর, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেটা কমেছে ১৫%-এরও বেশি। শুধু তাই নয়, গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে যতগুলো উপনির্বাচন বা পৌর নির্বাচন হয়েছে, সবগুলোতেই দেখা গিয়েছে বিজেপির ভোটের শতাংশ কমেছে।
যার ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলকে আশানুরূপ মানতে নারাজ বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। একবছরও হাতে নেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলকেই যদি লোকসভার পর্যায়ে বিবেচনা করা হয়, তবে রীতিমতো সংকটে আছে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদ থেকে সদ্য অপসারিত দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক, শান্তনু ঠাকুর, সুভাষ সরকার, জন বারলাদের আসন।
অথচ, এবার দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৩৫টি লোকসভা আসন পাওয়ার আশা করছেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি আসন। তারপর অনেক বদল ঘটেছে। ব্যারাকপুরের অর্জুন সিং নামে বিজেপির সাংসদ থাকলেও তৃণমূলের পতাকা ধরেছেন। বাবুল সুপ্রিয় সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে রাজ্যের মন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন। আবার পালটা, শিশির ও দিব্যেন্দু অধিকারীও নামে তৃণমূলের সাংসদ থাকলেও কার্যত বিজেপির ঘনিষ্ঠ। শিশির অধিকারীর মেজ ছেলে শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। দলের সর্বভারতীয় নীতিকে মাথায় রাখলে বয়সজনিত কারণে এবার শিশির অধিকারীকে লোকসভা নির্বাচনে টিকিট না-ও দিতে পারে বিজেপি। কিন্তু, সেটা গেল একটি লোকসভা আসন। তার দায়িত্ব বিজেপি শুভেন্দু অধিকারীর ওপর ছেড়ে দিতে পারে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত।
কিন্তু, বাকি আসনগুলোর ক্ষেত্রে দলের সাংগঠনিক হাল নিয়ে চিন্তিত বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। আর, তাই বাড়ল সাংগঠনিক জেলার সংখ্যাও। সেটা বেড়ে হল ৪৩টি সাংগঠনিক জেলা। এর মধ্যে কলকাতা দক্ষিণ ভেঙে তৈরি হল নতুন যাদবপুর জেলা। যার সভাপতি করা হল কুন্তল চৌধুরীকে। গঠিত হল মুর্শিদাবাদ জেলাও। যার সভাপতি হলেন সৌমেন মণ্ডল। বাকি যে জেলার সভাপতিদের বদল করা হল, তাঁরা হলেন- আলিপুরদুয়ারের ভূষণ মোদক। তাঁর বদলে নতুন সভাপতি করা হল মনোজ টিগ্গাকে। টিগ্গার মতই কয়েকজন বিধায়ককে রবিবার জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার মধ্যে তমলুকের জেলা সভাপতি হলেন হলদিয়ার বিধায়ক তথা শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ সিপিএম থেকে বিজেপিতে আসা তাপসী মণ্ডল।
আরও পড়ুন- একক শক্তিতে ব্রিগেড SUCI-এর, অভিনন্দনের আড়ালে কী কৌশল তৃণমূলের?
এছাড়াও কাঁথির জেলা সভাপতি হলেন অরূপকুমার দাস, ঘাটালের তন্ময় দাস, ঝাড়গ্রামের তুফান মাহাতো, মেদিনীপুরের তাপস মিশ্র, বাঁকুড়ার সুনীল রুদ্র মণ্ডল, বিষ্ণুপুরের অমরনাথ শাখা, পুরুলিয়ার বিবেক রাঙা, আসানসোলের বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমানের অভিজিৎ তা, কাটোয়ার গোপাল চট্টোপাধ্যায়, বোলপুরের সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল, বীরভূমের ধ্রুব সাহা, হাওড়া সদরে রমাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। কলকাতা দক্ষিণের সভাপতি পদ থেকে সঙ্ঘমিত্রা চৌধুরীকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অনুপম ভট্টাচার্যকে। বেশ কিছু সাংগঠনিক জেলায় সভাপতি বদলানো হয়নি। যেসব জায়গায় সভাপতি বদলানো হয়েছে, সেখানে জেলা এবং মণ্ডলস্তরেও সাংগঠনিক রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।