Advertisment

বিজেপিতে বিদ্রোহ! লোকসভা নির্বাচনে ৩৫ আসন জয় আদৌ সম্ভব?

রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, অমিত মালব্যর মত নেতারা সাংগঠনিক পরিবর্তন ইস্যুতে দলের মধ্যে ক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রবীণদের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন দলীয় ক্যাডারদের একাংশ।

IE Bangla Web Desk এবং Chinmoy Bhattacharjee
New Update
State BJP president Sukanta Majumdar

রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দলের কিছু কর্মীদের ক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছেন। ওই সব কর্মীদের অভিযোগ, সুকান্ত মজুমদার এবং অন্যান্য নেতারা টিএমসির সঙ্গে যোগসাজশ রেখে কাজ করছেন। (পিটিআই)

আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কমপক্ষে ৩৫টি আসনে জয়ী হতে চায় বিজেপি। লক্ষ্য পূরণের জন্য যখন একবছরও সময় হাতে নেই, সেই সময় দলের রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে রাজ্য বিজেপির দফতরেই আছড়ে পড়েছে কর্মীদের ক্ষোভ। খোদ রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার নিজেই দলের কিছু কর্মীর ক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছেন। যা আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় দলের সাফল্যের সম্ভাবনায় আঘাত হানতে পারে বলেই মনে করছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।

Advertisment

এটাই অবশ্য প্রথম নয়। গত কয়েক বছর ধরেই বঙ্গ বিজেপি জেলাস্তরে সাংগঠনিক পরিবর্তনের ফলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সম্মুখীন হয়েছে। তার মধ্যেই যেহেতু বিজেপি পঞ্চায়েত নির্বাচনে তার সাফল্যের চিহ্ন তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে, চলতি বছরের শুরুতে ধূপগুড়ি বিধানসভা উপনির্বাচনে টিএমসির কাছে হেরেছে, সেই কারণে দলীয় কর্মীরা রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে চরম অসন্তুষ্ট। তাঁরা বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযোগ করেছেন, রাজ্য নেতারা দলের প্রবীণ নেতাদের অবদান উপেক্ষা করছেন। তার ফলেই তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।

এখানে রাজ্য বিজেপি কর্মীদের সাম্প্রতিক কয়েকটি বিক্ষোভের উদাহরণ তুলে ধরা হল:
১২ সেপ্টেম্বর: কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারকে বাঁকুড়ায় বিজেপির একটি অফিসে তালাবদ্ধ করা হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তৃণমূলের 'নৃশংসতা' থেকে দলীয় কর্মীদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

২৩ সেপ্টেম্বর: বাঁকুড়ার কিছু বিজেপি কর্মী টায়ার জ্বালিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর কথিত স্বৈরাচারী মনোভাবের জন্য, বিশেষ করে নিয়োগের বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

১১ অক্টোবর: উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বারাসত থেকে বিজেপি কর্মীদের একটি দল কলকাতার সল্টলেকে পার্টি অফিসের বাইরে হট্টগোল তৈরি করেছিল। কারণ, তাঁদের না জানিয়ে বারাসত সাংগঠনিক জেলা কমিটি একটি সাংগঠনিক বৈঠকের আয়োজন করেছিল। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ ছিল, জেলা বিজেপিতে থাকা কয়েকজন পদাধিকারী আসলে তৃণমূলের সমর্থক।

১২ অক্টোবর: মধ্য কলকাতায় দলের রাজ্য দফতরের বাইরে কিছু বিজেপি কর্মী বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী আসলে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রয়েছে। ওই দু'জনের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিক্ষোভকারী বিজেপি কর্মীরা।

সর্বশেষ বিক্ষোভের সময়, দলের কিছু কর্মী পশ্চিমবঙ্গের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য এবং সাংসদ জগন্নাথ সরকারের বিরুদ্ধে বিরক্তি প্রকাশ করেন। পালটা দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমাদের দল শৃঙ্খলার জন্য পরিচিত। আমরা শৃঙ্খলাহীনতা সহ্য করব না। অসন্তুষ্ট দলের কর্মীদের অবশ্যই দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে বা যথাযথ পথে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু, কোনও অবস্থাতে এই ধরনের প্রতিবাদ বরদাস্ত করা যায় না। আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।'

পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৫টি আসনে জয়ের ব্যাপারে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। তারমধ্যে এই সব বিক্ষোভগুলি রাজ্য বিজেপির মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি করতে যথেষ্ট। ২০১৯ সালে দল ২২টি লোকসভা আসনে জয়লাভ করেছে। যা সংসদ নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সর্বকালের সেরা পারফরম্যান্স। আর, তার পর পরবর্তী লোকসভা ভোটের আগের বছর এই বিক্ষোভ! ফলে, রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের রীতিমতো চিন্তা ধরার কথা।

এই পরিস্থিতিতে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বকে নরম পন্থা অবলম্বন করতে বলেছেন। তিনি বলেন, 'আমাদের এই জাতীয় সমস্যাগুলি মোকাবিলা করার জন্য আরও সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি থাকা দরকার। দলের কর্মীরা আমাদের সম্পদ। দলের জন্য তাঁদের অবদানকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। বিক্ষোভের পিছনের কারণগুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। আমাদের অবশ্যই তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে, তাঁদের উদ্বেগের সমাধান করতে হবে।'

বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নতুনদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া এবং দিলীপ ঘোষের মতো প্রবীণ ব্যক্তিদের উপেক্ষা করার অভিযোগ করেছেন। এই সব কর্মীদের অনেককেই দিলীপ ঘোষ রাজ্যে জায়গা পেতে সাহায্য করেছিলেন। সেই দিলীপ ঘোষকেই জুলাই দলের জাতীয় সহ-সভাপতি পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরে এই গোলমাল দেখে রীতিমতো আনন্দ পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তারা এই ঘটনায় রাজ্য বিজেপিকে কটাক্ষ করার সুযোগ হাতছাড়া করেনি। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, 'বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে চায় কিন্তু বাস্তবটা হল, রাজ্য বিজেপি এখন স্রেফ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সামলানোর জন্য লড়াই করছে। তাদের উচিত টিএমসিকে পরাজিত করার স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দলীয় কলহ নিয়ন্ত্রণ করা।'

আরও পড়ুন- জাগ্রত সর্বমঙ্গলা মন্দিরে পালিত চিরাচরিত প্রথা, প্রতিপদেই দুর্গাপুজোর কাঠি পড়ল রাঢ়বঙ্গের ঢাকে

আর, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেছেন, 'শীত আসার আগেই বিজেপিতে একটা সার্কাস শুরু হয়েছে। বিজেপি আজ ভারতীয় জোকার পার্টি হয়ে উঠেছে। দলটি কোন্দলে জর্জরিত। দলীয় নেতাদের আটকে দলীয় কার্যালয়ে তালা দেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তারা কীভাবে আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে? তারা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছিল। এখন তারা তাদের কর্মীদের সঙ্গেই যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছে।'

Sukanta Majumder dilip ghosh Clash Minister Subhash Sarkar bjp tmc
Advertisment