Advertisment

স্কুলের জমিতে চাষ, মিড ডে মিলের ১৮ মন আলু ফলালেন শিক্ষক-ছাত্ররাই

শিক্ষা মানে যে শুধু পুঁথিগত নয়, এটা বোঝাতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন স্কুলের শিক্ষকরা।

author-image
Chinmoy Bhattacharjee
New Update
Kashiramdas_Vidyayatan 1

এই আলুই স্কুলের জমিতে ফলিয়েছেন পড়ুয়ারা। ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

বাংলাতেও মিড ডে মিল নিয়ে হামেশাই ওঠে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। তা নিয়ে কেন্দ্র পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল ঘুরে মিড ডে মিলের হাল খতিয়ে দেখে গিয়েছে কেন্দ্রীয় দল। এইসব নিয়ে তরজা জারি থাকার মাঝেই এক দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার কাশীরামদাস বিদ্যায়তনের পড়ুয়া ও শিক্ষকরা। তাঁরা সমবেত ভাবে স্কুলের জমিতে চাষ করে সারা বছরের মিড ডে মিলের প্রয়োজনীয় আলু উৎপাদন করেছেন। শিক্ষক ও পড়ুয়াদের এই কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন কাটোয়ার শিক্ষানুরাগী মানুষজন।

Advertisment

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে সুনাম কুড়োনো বাংলার বিদ্যালয়গুলির অন্যতম কাটোয়া কাশীরামদাস বিদ্যায়তন। পঠনপাঠনে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নানা বিষয়ে পড়ুয়াদের হাতে-কলমে শিক্ষাও দিয়ে থাকেন। কৃষিকাজ কীভাবে করতে হয়, তা হাতেকলমে বোঝাতে ইতিপূর্বে পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়েই শিক্ষকরা স্কুলের জমিতে নানা আনাজ ফলিয়ে ছিলেন। সেই আনাজ মিড ডে মিলে লাগে। একই পথে হেঁটে এবছর শীতের মরশুমে পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়েই স্কুলের জমিতে আলু চাষ করেছিলেন শিক্ষকরা। কয়েক মাসের পরিচর্যায় সেই জমিতে ফলেছে ১৮ মন আলু। এই আলু স্কুলের মিড ডে মিলের জন্য অনেকটা সহায়ক হবে জেনে পড়ুয়ারাও যারপরনাই খুশি।

publive-image
ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

এই স্কুলের পড়ুয়াদের কাছে অতিপ্রিয় ভূগোলের শিক্ষক টোটন মল্লিক। প্রতিবছর শীতের মরশুমে স্কুলের জমিতে নানা ধরনের ফুল, আনাজপাতির গাছ বসানো তাঁর নেশা। যাতে করে পড়ুয়াদের মানসিক বিকাশ ঘটে, তাই পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়েই তিনি এই কাজ করেন। টোটনবাবু গত কয়েক বছর যাবৎ স্কুলে শীতকালীন নানা আনাজ চাষ করেছিলেন। সেই আনাজ, স্কুলের মিড ডে মিলের কাজে লেগেছিল। এবছর শীতের মরশুম শুরুর প্রাক্কালেই তিনি স্কুলের কাছে থাকা স্কুলের পতিত জমিতে আলু চাষের পরিকল্পনা সেরে ফেলেন। সেই মতই মাস তিন, জমি তৈরি থেকে শুরু করে বীজ বপন- সবই পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে করে ফেলেন।

জমিতে দাঁড়িয়েই শিক্ষক টোটনবাবু ছাত্রদের বুঝিয়ে গিয়েছেন, কী ভাবে আলু জমিতে সেচ দিতে হয়। রোগ আর পোকার দমনে কী কী করণীয়। পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে সপ্তাহখানেক আগে তিনি ওই জমিতে ফলা আলু, জমির মাটি থেকে তোলেন

। নিজের হাতে স্কুলের জমিতে আলু ফলিয়ে আত্মহারা পড়ুয়ারা নিজেরাই আলু ঝুড়িতে বোঝাই করে একের পর এক বস্তায় ভরে ফেলে। ফসল ফলানোর আনন্দে কোনও ছেদ আজও পড়েনি পড়ুয়াদের মধ্যে।

শিক্ষক টোটন মল্লিক বলেন, 'প্রতিবছরই আমি ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে ফুল ও নানা ধরনের আনাজ চাষ করে থাকি। এতে ওদের মানসিক বিকাশও ঘটে। এবছর স্কুলের কাঠা দশেক জমিতে আলু চাষ করে প্রায় ১৮ মন আলু ফলাতে পেরেছি। ওই আলুর সবটাই স্কুলের মিড ডে মিলে লেগে যাবে।' কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনের প্রধান শিক্ষক কমলকান্তি দাস বলেন, 'আমাদের স্কুলের শিক্ষক টোটন মল্লিক কৃষিকাজ সম্পর্কে ছাত্রদের হাতে-কলমে যে ভাবে শিক্ষা দেন, তা দেখে আমরাও খুশি।'

আরও পড়ুন- প্রচারের ঢক্কানিনাদে সরগরম সাগরদিঘি, কেন গুরুত্বপূর্ণ এই উপনির্বাচন?

স্কুলের উঁচু ক্লাসের দাদারা স্কুলের জমিতে যে ভাবে আলু ফলিয়েছে, সেটা নীচু ক্লাসের পড়ুয়াদেরও অনুপ্রাণিত করেছে। স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মানসিক বিকাশ পাল এদিন জানায়, 'স্কুলে টিফিন হবার পর আমি ও অন্য সহপাঠীরা মিলে ওই আলু চাষের জমি দেখতে যেতাম। আলু গাছ যত বড় হচ্ছিল, আমাদেরও আনন্দ বাড়ছিল। কিছুদিন আগে টোটন স্যারের সঙ্গে হাতে হাত লাগিয়ে উঁচু ক্লাসের দাদারা যখন জমি থেকে ঝু়ড়িতে আলু তুলে একের পর এক বস্তায় ভরছিল, তখন আমাদেরও খুব ভালো লাগছিল। ইচ্ছা হচ্ছিল ওই ভাবে বস্তায় আলু ভরার।' উঁচু ক্লাসে পড়ার সময়ে এইরকমটাই করে দেখানোর বeসনা প্রকাশ করেছে শুভাশিস ও তাঁর সহপাঠীরা।

এক পড়ুয়ার অভিবাবক বাসুদেব দাস বলেন, 'লেখাপড়া শেখার পাশাপাশি স্কুলে কৃষিকাজ নিয়েও আমাদের বাড়ির ছেলেরা হাতে-কলমে শিক্ষা পাচ্ছে। রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলার বাসিন্দা হওয়ায় এটা আমাদের কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি।'

agriculture school Mid day Meal
Advertisment