/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2024/07/cats_5d64e1.jpg)
গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে মালদা মেডিকেল কলেজে।
Maldah News: পথ অবরোধ তুলতে গিয়ে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ালো মালদার মানিকচক থানার এনায়েতপুর এলাকায়। পুলিশের ওপর হামলা এবং গাড়ি ভাঙচুর করার ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড গুলি চালাতো হয় পুলিশকে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় গুলি বিদ্ধ হয়েছেন দুই যুবক। এমনকি বিক্ষোভকারীদের পাল্টা ধাওয়ায় পুলিশকে একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে থাকতে হয়। পরে মানিকচক থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে ঘটনাস্থলে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। ফাটানো হয় বেশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস। এই পরিস্থিতিতে বিক্ষোভকারীদের হামলায় মাথা ফাঁটে মানিকচক থানার আইসি পার্থ প্রতিম হালদারের। তাকে চিকিৎসার জন্য মালদার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। এছাড়াও আরো দুইজন পুলিশ কর্মী বিক্ষোভকারীদের হামলায় জখম হয়েছেন। তাঁরাও চিকিৎসাধীন মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে। পাশাপাশি গুলিবিদ্ধ দুই যুবককে ভর্তি করানো হয়েছে মালদা মেডিকেল কলেজে। দুইজনেরই পায়ে গুলি লেগেছে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ। পরে মালদা জেলার পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদবের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী, কমব্যাট ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছায় । এরপরই ওই এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে আর এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রীতিমতো অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে মালদা - মানিকচক রাজ্য সড়ক। পুলিশ ওই স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত থেকেই অন্ধকারে ডুবে রয়েছে মানিকচক থানার এনায়েতপুর সহ বেশ কয়েকটি এলাকা । আর এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এদিন সকাল থেকেই এনায়েতপুরের বেশ কয়েকটি এলাকার দফায় দফায় রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান শতাধিক গ্রামবাসীরা। যাদের মধ্যে মহিলারাই বেশি ছিলেন। এদিন দুপুর বারোটা নাগাদ অবরোধ তুলতে গিয়েই বিক্ষোভের মুখে পড়ে মানিকচক থানার কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। তারপরই আচমকা পুলিশকে ইঁট ,পাথর নিয়ে ধাওয়া করে বিক্ষোভকারীদের একাংশ বলে অভিযোগ। কয়েকজন হাতে গোনা পুলিশ কর্মী ঘটনাস্থলে থাকায় তাদের পিছিয়ে আসতে হয়। সেই সময় পুলিশের একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয় কর্তব্যরত কয়েকজন পুলিশ কর্মী। আর সেই বাড়িকে লক্ষ্য করে পুলিশকে এলোপাথাড়ি ইঁট , পাথর ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন - < Suvendu Adhikari: BJP-তে সংখ্যালঘু মোর্চা চান না শুভেন্দু, এই প্রসঙ্গে এতদিনে কী বললেন তথাগত? >
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশকে কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে হয় । এমন উত্তেজনার খবর পেয়ে মানিকচক থানার আইসি পার্থসারথী হালদারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলেপৌছায়। তখনই পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে খন্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় । বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া ইঁটের আঘাতে আইসির মাথা ফেটে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাইরে বেরিয়ে যায়। তখনই পুলিশ গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাই । সেই সময় পুলিশের গুলিতে দুইজন পথচারী জখম হন। এনায়েতপুর এলাকার বাসিন্দা গুলিবিদ্ধ আকবর শেখ জানিয়েছেন, এদিন বিক্ষোভের সময় তিনি রাস্তা দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। আচমকায় তার বাম পায়ে গুলি লাগে । স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মালদা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসার জন্য ভর্তির ব্যবস্থা করেন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছে বলেও জখম দুই যুবকের অভিযোগ।
এদিন বিকেলে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সংশ্লিষ্ট প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে লোডশেডিং শব্দটি চিরতরে তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । যেখানে অন্যান্য রাজ্যে প্রায় দিনই ছয় থেকে আট ঘন্টা লোডশেডিং হয়। সেই ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে এক মিনিটও লোডশেডিং হয় না। তবে মালদার মানিকচকে এনায়েতপুরে সমস্যা হচ্ছে বৈদ্যুতিক হাই টেনশন টাওয়ার বসানো নিয়ে । উন্নত মানের বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে মালদা পাওয়ার গ্রিড থেকে মানিকচক পর্যন্ত ৮৯ টি টাওয়ার বসানোর কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে ৮৬টি টাওয়ার বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনটি টাওয়ার বসানো বাকি রয়েছে। কিছু এলাকার মানুষের অসহযোগিতার কারণেই এই তিনটি হাই টেনশন টাওয়ার বসানোর ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে মালদা জেলা পুলিশ , প্রশাসন , বিদ্যুৎ দপ্তর সক্রিয়তার সাথে কাজ করে চলছে। এই তিনটি টাওয়ার বসানো হলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মালদায় উন্নতমানের বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে
এদিকে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কয়েক দিন ধরেই গ্রামে লোডশেডিং চলছে। বুধবার রাত থেকে একটানা লোডশেডিং-এর জেরে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হয়েছে। অনেকেই গরমের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ছোট ছোট শিশুরাও গরমের জ্বালায় ছটফট করছে। লোডশেডিং-এর জেরে পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এইসব ঘটনার বিষয় প্রতিবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু আচমকায় পুলিশ এসে আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং গুলি চালাই। তখনই বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়ে যায়।যদিও এই ব্যাপারে মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানিয়েছেন, কোনোরকম গুলি চলে নি। পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুলিশের উপর হামলা সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।