বাড়ি থেকে জানলার দুরত্ব খুব বেশি নয়, মাত্র ১২ ফুট। এতদিন সেই জানলা খোলা থাকলেও মঙ্গলবারের খুনের পর থেকে বন্ধুপ্রকাশ পালের 'অভিশপ্ত বাড়ি' যাতে না দেখতে হয় সে জন্য জানলা বন্ধ করে দিয়েছেন বন্ধুপ্রকাশের প্রতিবেশী রানা বিশ্বাস। এই নৃশংস খুনের আতঙ্ক গ্রাস করেছে পাশের বাড়ির ছবি দাসকেও। পেশায় রোল-চাউমিন বিক্রেতা ছবিদেবী বলেন, "বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি এখন আমাদের কাছে একটা দুঃস্বপ্ন। আমরা ওই বাড়ির দিকে তাকাতেও পারছি না। আমরা পুলিশকে বলেছি যে ঘরে ঘটনাটি ঘটেছে সেই ঘরের জানলা যেন অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হয়।"
বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি দেখাচ্ছেন আতঙ্কিত প্রতিবেশী। ছবি- পার্থ পাল
কেন এমন আতঙ্কিত প্রতিবেশীরা?
দশমীর আনন্দের মাঝেই মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ এলাকার লেবুতলায় নিজের বাড়িতে খুন হন বন্ধুকিশোর পাল (৪০) এবং তাঁর স্ত্রী বিউটি পাল (৩০) ও পুত্র অঙ্গন (৫)। বন্ধুকিশোর এবং তাঁর ছেলের দেহ ছিল একটি ঘরে, অপর একটি ঘরে ছিল বিউটি পালের দেহ। তদন্তে নেমে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, বন্ধুপ্রকাশ এবং তাঁর স্ত্রীকে কুপিয়ে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা। অন্যদিকে পাঁচ বছরের অঙ্গনকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে এবং পরবর্তীতে মৃত্যু নিশ্চিত করতে কোনও ভারী কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে পুলিশ।
আরও পড়ুন- জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ড: ‘আমি যেটা পারিনি, তোমার ভাল বউ সেটা দেবে’, পুলিশের নজরে বন্ধুর বাবা ও স্ত্রীর নোট
এদিকে সোশাল মিডিয়ায় এই খুনের ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই আতঙ্ক গ্রাস করেছে গোটা এলাকাকে। স্থানীয়দের বক্তব্য, জনবসতিপূর্ণ এমন এলাকায় বিজয়া দশমীর দিনের এই ঘটনা কেউ টের পেল না তা কীভাবে সম্ভব? বন্ধুকিশোর পালের বাড়ি থেকে ১০ ফুট দূরত্বে বসেই পাড়ার অনেকেই গল্প করছিলেন সেদিন। কিন্তু তারপরেও কীভাবে এমন নৃশংশ ঘটনা ঘটল তা নিয়েই আতঙ্কিত স্থানীয়রা। প্রতিবেশীরা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, দেড় বছর আগে এই এলাকায় আসেন বন্ধুকিশোর এবং তাঁর পরিবার। কিছুদিন আগে বাড়ির সামনে একটি বারান্দাও তৈরি করেছিলেন তিনি।
বন্ধুপ্রকাশের বন্ধ বাড়ি। জানলার বাইরে থেকে তোলা ছবি। এক্সপ্রেস ফটো: পার্থ পাল।
আরও পড়ুন- জিয়াগঞ্জকাণ্ড: ‘বন্ধু শুধু আমাদের, আর কারোর নয়’
বন্ধুকিশোরের পাশের বাড়ির বাসিন্দা সুনীতা হালদার বলেন, 'বন্ধুকিশোর ধীরে ধীরে বাড়িটা তৈরি করছিলেন। তবে ওঁরা কেউই খুব একটা মিশত না পাড়ার বাকিদের সঙ্গে। কিন্তু সবসময় হাসিখুশি থাকত বন্ধুকিশোর। সামনাসামনি দেখা হলে হেসেই কথা বলত।" তবে খুনের দিন আততায়ীকে পালাতে দেখেছিলেন বন্ধুকিশোরের পাশের বাড়ির বাসিন্দা পঙ্কজ সরকার। দিল্লিনিবাসী পঙ্কজ দুর্গাপুজো উপলক্ষে এসেছিলেন জিয়াগঞ্জে নিজের বাড়িতে। তিনি বলেন, "রাধা কৃষ্ণ মন্দিরের পাশে বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলাম, সেই সময় ওদের বাড়ি থেকে টি শার্ট পরে একজনকে রাস্তার দিকে পালিয়ে যেতে দেখি। ওভাবে পালাতে দেখে আমিও পিছু নিই। কিন্তু ধরতে পারেনি। যখন বাড়ি ফিরি, তখন দেখি বন্ধুকিশোরদের বাড়ির সামনে প্রচুর ভিড়। সকলে বলাবলি করছে যে পরিবারের সকলেই খুন হয়ে গিয়েছে। আমি বাড়ির ভিতর যাইনি। তবে সোশাল মিডিয়ায় সেই ভিডিও দেখেছি।"
পঙ্কজ সরকারের দাদা এবং এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর মনোজ সরকার বলেন, "আমরা এই অঞ্চলে বহুবছর ধরে আছি। এটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ এলাকা। এখানে কখনও এ ধরনের নৃশংস অপরাধ ঘটতে দেখিনি। পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি, সেটাই চিন্তার। আমরা চাইছি, দোষীদের শাস্তি হোক।"
Read the full story in English