জাগ্রত সর্বমঙ্গলা মন্দিরে পালিত চিরাচরিত প্রথা, প্রতিপদেই দুর্গাপুজোর কাঠি পড়ল রাঢ়বঙ্গের ঢাকে

কয়েক শতাব্দী ধরে এমনটাই চলে আসছে। ছিলেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, জনপ্রতিনিধিরা।

কয়েক শতাব্দী ধরে এমনটাই চলে আসছে। ছিলেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, জনপ্রতিনিধিরা।

New Update
SARBAMANGALA

এঁদের অনেকেই বংশ পরম্পরায় এই মন্দিরে ঢাক বাজাচ্ছেন।

সাবেকি প্রথা মেনে প্রতিপদে বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরে ঘট স্থাপনের সঙ্গেই গোটা রাঢ়বঙ্গে দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেল। রবিবার, প্রতিপদে বর্ধমানের রাজাদের খনন করা কৃষ্ণসায়র থেকে ঘটে জল ভরা হল। প্রথা অনুযায়ী, সেই ঘট সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরে স্থাপন করা হল। দেবীকে পরানো হল রাজবেশ। আর এরই মধ্য দিয়ে কার্যত বর্ধমান-সহ কার্যত গোটা রাঢ়বঙ্গে রবিবার থেকেই দুর্গাপুজো শুরু হয়ে গেল। কারণ, এমনটাই যুগ যুগ ধরে মানা হয়ে আসছে।

Advertisment
publive-image

বর্ধমানের রাজারা জন্মসূত্রে ছিলেন পাঞ্জাবি। পরে বধূ হিসেবে নানা রাজ্যের মেয়েরা এসেছেন পরিবারে। নানা সংস্কৃতি, লোকাচারের মিশেল হয়েছে এখানে। প্রতিবার প্রতিপদে শুরু হয় রাঢ়-জননী সর্বমঙ্গলার পুজো। কৃষ্ণসায়র থেকে আচার মেনে জল ভরা হয়। এরপর হয় ঘটস্থাপন। পুজো চলবে নবমী অর্থাৎ নবরাত্রি অবধি। বহু প্রাচীন সর্বমঙ্গলা মন্দিরে অধিষ্ঠাত্রী দেবীকে অত্যন্ত জাগ্রত দেবী হিসেবেই মানেন গোটা পূর্ব বর্ধমান-সহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দারা।

publive-image

কথিত আছে রাজা তেজচাঁদের আমলে এই মন্দির নির্মাণ হয়েছিল। মন্দির ঘিরে অনেক উপকথা আছে। চুনুরি বাড়ির মেয়েরা নাকি দেবীর পাষাণপ্রতিমায় গুগলি থেতো করতেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবীকে এই প্রাচীন মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেবী দুর্গা এখানে সর্বমঙ্গলা রূপে পূজিতা হন। সারাবছরই দেবীর নিত্যপূজা চলে। পুজোর চার দিন ষোড়শোপচারে দেবীর আরাধনা হয় এই মন্দিরে। আগে মহিষ ও পাঁঠা বলি হত। এখন বলিদান বন্ধ। আগে সন্ধিপুজোর মহালগ্নে কামান দাগা হত। কিন্তু, ১৯৯৭-এ বিস্ফোরণের পর থেকে সেই প্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Advertisment
publive-image

চারপাশে বিশাল বাজেটের থিমের পুজোর ঘনঘটা যাই থাক না-কেন, সর্বমঙ্গলা দেবীর আরাধনা ঘিরে ভক্তদের আবেগ এখনও একইরকম। পুজোর পাঁচ দিন এখানে তিলধারণের জায়গা থাকে না। হাজারে হাজারে ভক্ত সমবেত হন। মাছের টক-সহ নানা উপাচারে দেবীর ভোগ দেওয়া হয়। মালসাভোগ নিতে ভক্তরা ভিড় করেন। নবমীতে কয়েক হাজার মানুষকে ভোগ বিলি করা হয়।

publive-image

রবিবার সকালে পূজার্চনার পর মন্দির থেকে মায়ের রুপোর ঘট নিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। ঢাক-সহ বিভিন্ন বাজনা নিয়ে ঘোড়ায় টানা রথের ওপর বিশেষ ছাতার তলায় ঘট নিয়ে বসেন পুরোহিতরা। বেশ খানিকটা পথ পরিক্রমা করে শোভাযাত্রা যায় কৃষ্ণসায়রে। সেখানে মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ঘট জলপূর্ণ করেন। এরপর তা নিয়ে এসে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রশাসনের আধিকারিকরা।

Durgapuja Durga Puja pujo